• ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কমলগঞ্জের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

admin
প্রকাশিত জুন ২৩, ২০১৮

ষ্টাফ রিপোর্টার: টানা বর্ষণে ও উজানের ঢলে গত ১২ জুন মঙ্গলবার থেকে কমলগঞ্জে ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার সৃষ্টি হয়। পর্যায়ক্রমে ধলাই ও মনু নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় ১৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয় এবং দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানির স্রোতে বাবা-ছেলে ও এক শিশু সহ ৫ জনের মৃত্যু হয়।

ইসলামপুর, আদমপুর, আলীনগর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদর, পৌরসভা, শমশেরনগর, রহিমপুর, মুন্সীবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়ন ও চা বাগানে এক হাজারেরও বেশি কাঁচা ও আধা কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত ঘরের পরিবার সদস্যরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্বাচন এলাকার লোকদের।
পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানান, ব্যাপক এলাকায় রাস্তাঘাট, কালভার্ট, আউশ ও সবজি ক্ষেত এবং অসংখ্য ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সহসাই এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিএডি) কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কিরণ চন্দ্র দেবনাথ জানান, এ পর্যন্ত ১৯টি রাস্তায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তবে কালভার্টসহ এখন পর্যন্ত আর্থিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, কৃষির এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি। এ পর্যন্ত ৫৫০ হেক্টরের আউশ ক্ষেত ও ২০ হেক্টরের সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্তের হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে সবকটি ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিদের হিসাবে দেড় হাজার হেক্টরেরও বেশি আউশ ও ৫০ হেক্টরেরও বেশি সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বন্যার কারণে এ উপজেলার দেড় সহস্রাধিক মৎস্য খামারীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সরকারি ও বেসরকারি প্রদর্শনী খামারসহ মোট ১ হাজার ৫ শত ৫০টি পুকুর প্লাবিত হয়। প্লাবনের আয়তন ছিল ১৪০ হেক্টর। ভেসে যাওয়া মাছ ও পোনার পরিমাণ ছিল ৪৭০ মে.টন। খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ হবে ৫০ লাখ টাকা। সার্বিকভাবে মোট ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা । তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের আবেদন গ্রহণ করে মৎস্য খামারীদের বাঁচিয়ে রাখতে ক্ষতিপূরণে সরকারি সহায়তার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বলেন, ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে। সবকটি ইউনিয়নে তড়িৎ গতিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কোন লোকই তালিকা থেকে বাদ যাবে না। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, বন্যায় কমলগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সহস্রাধিক ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। নিহতদের পরিবারবর্গকে ২০ হাজার করে টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। তবে কৃষি, মৎস্য, সড়ক সব মিলিয়ে সার্বিকভাবে এখনও পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে সার্বিকভাবে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য মতে, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা, চা বাগান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উপজেলার প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ১২ জুন থেকে কমলগঞ্জের ধলাই নদের প্রতিরক্ষা ৮টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার ১৪৫ টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে । বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক কাঁচা ঘর, সড়ক ও জনপথের দু’টি ও এলজিইডি’র ১৯টি রাস্তা, দেড় হাজার হেক্টরের আউশ, ৫০ হেক্টরের সবজি এবং মৎস্য খামারীদের ১ হাজার ৫শ’ ৫০টি পুকুরের ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার মাছ।

সরকারীভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ চলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, পানি সম্পদ সচিব এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব কমলগঞ্জের কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রবাসীদের অর্থায়নে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তবে অনেক বন্যাদুর্গত কিছু এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের হাতে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার সাম্প্রতিক বন্যায় সহস্রাধিক মানুষের শেষ আশ্রয় বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে সরকারী ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রদত্ত চালসহ অন্যান্য ত্রাণ বিতরণেও কোথাও কোথাও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।