• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রাজনগরের ফতেপুরে সরকারীত্রানের চাল ওজনে কম !

admin
প্রকাশিত মে ১, ২০২০
রাজনগরের ফতেপুরে সরকারীত্রানের চাল ওজনে কম !
নিজস্ব প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুরে সরকারী ত্রানের চাল বিতরণে দফায় দফায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তালিকায় ভুয়া নাম, স্বজনপ্রীতি, ওজনে কম দেয়া, চাল গ্রহিতাদের কাছ থেকে টাকা আদায় সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় এলাকার সচেতন মহল নানা মন্তব্য করে আসলেও ঠনক নড়ছেনা সংস্লিষ্ট কতৃপক্ষের। স্থানীয় সাংবাদিকদকদের কাছে সচেতন মানুষজন বিভিন্ন সময় মৌখিকভাবে নানা অভিযোগ আসলে, সাংবাদিকরা অনুসন্ধান শুরু করেন।
জানাযায়, গত কয়েকদিন পুর্বে ১৮৫টি পরিবারে ১০ কেজি চাল ও ২ কেজি আলু বিতরণ করা হয়। চাল বিতরণের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এলাকার সচেতন মানুষজন তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কেউ বলে তালিকায় কিছু ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে,আবার কেউ বলেন তালিকায় ব্যাপক স্বজনপ্রীতি সহ একই পরিবার বার বার সরকারী অনুদান পাচ্ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান করে অভিযোগের কিছু সত্যতাও পাওয়া যায়। তালিকার ১১৬ নং এ এবাদ মিয়া পিতা বদি মিয়া,গ্রাম তুলাপুর উল্যেখ করা হলেও এ নামে উক্ত গ্রামে কোন মানুষ নাই বলে গ্রামবাসী নিশ্চিত করেন। এভাবে তালিকার আরো কিছু নামের সাথে পিতার নাম কিংবা গ্রামের নামের মিল পাওয়া যায়নি। আবার কিছু পরিবারে ভিজিডি চাল পাওয়ার পরও ত্রানের ১০ কেজি চাল পাওয়ার অভিযোগের ও সত্যতা পাওয়া গেছে।আবার কারো কাছ থেকে ১০টাকা গাড়ী ভাড়াও আদায় করা হয়েছে। যার প্রমান এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
গত শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) এ প্রতিবেদক ফতেপুরের মোকামবাজারে অবস্থানকালে একজন দোকানী উপকারভোগি একজনের চাল তার দোকানের মিটারে মেপে প্যাকেটে ১ কেজির বেশী চাল কম থাকার বিষয়টি প্রতিবেদককে জানালে এ প্রতিবেদক ইউপি অফিস থেকে চাল নিয়ে বের হয়ে আসা কয়েকজন উপকারভোগির চাল মিটারে মেপে তার সত্যতা পাওয়া যায়।
৩/৪ জন উপকারভোগিকে নিয়ে প্রতিবেদক ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশের কাছে গিয়ে বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, গুদাম থেকে দেড়কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) উর্মি রায়কে ফোন দিলে তিনি জানান, গুদাম থেকে কোন চাল কম দেওয়া হয়নি। প্রতিজন ১০ কেজি চাল এবং ২ কেজি আলু পাওয়ার নিয়ম।
প্রতিটি প্যাকেটে ১ কেজি আবার কিছু প্যাকেটে দেড় কেজি চাল ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি জানান এসব বিষয় মৌখিক অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া যায়না! তাই তিনি প্রতিবেদককে একটি লিখিত অভিযোগ দেবার কথা বলেন। উত্তরে প্রতিবেদক জানান, যেহেতু এখনো ইউপি অফিসে চাল বিতরণ করা হচ্ছে তাই লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা না করে আপনি ট্যাগ অফিসারকে পাঠিয়ে সরেজমিন যাচাই করে নেন। আমি বিষয়টি দেখছি বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) ফোন রেখে দেন।
কিছু সময় পর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন এসিল্যান্ড ম্যাডাম তাকে ফোন দিয়ে চাল ওজনে কম দেবার বিষয়টি জানিয়েছেন,কিন্তু তিনি কয়েকটা প্যাকেট মেপে দেখেছেন চাল ঠিক আছে। প্রতিবেদক কয়েকজন উপকারভোগির চাল মেপে দেখেছেন বলে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি এ প্রতিবেদককে ইউপি অফিসে ডেকে নিয়ে ২ জন ইউপি সদস্য সহ এলাকার কিছু মানুষের সামনে প্রতিবেদককে ফের চালের প্যাকেট গুলা মেপে দেখার অনুরোধ করেন।এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান সহ বেশ কিছু চালের প্যাকেট মেপে প্রতিটা প্যাকেটে ১ কেজির বেশী চাল কম থাকার ফের প্রমান পাওয়া যায়। তখন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, যারা প্যাকেট করেছে তারা ভুল করেছে।
অধিকাংশ চালের প্যাকেট বিতরণের পর বিকালে খবর পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি অফিসার( ফতেপুরের ট্যাগ অফিসার) ইউপি অফিসে এসে কয়েকটি প্যাকেট মেপে প্রতি প্যাকেটে ওজনে কম ৪শ গ্রাম ৫শ গ্রাম কম পেয়েছেন।
যেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের সামনে চালের প্যাকেটে ১ কেজির বেশী ওজনে কম পাওয়া গেল,সেখানে (ট্যাগ অফিসার) তিনি কিভাবে বলছেন ৪শ গ্রাম ৫শ গ্রাম কম পাওয়া গেছে প্রশ্ন করলে উপজেলা কৃষি অফিসার জানান,তাহলে হয়ত আমি আসার খবর শুনে কয়েকটা প্যাকেট তারা ওজনে ঠিক করে নিছে।
এরপর এ প্রতিবেদক উপজেলা কৃষি অফিসারকে কয়েকটা ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেখার অনুরোধ করেন।
সন্ধ্যায় ফের ভারপ্রাপ্ত ইউএনওকে ফোন দিয়ে বিষয়টার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান,ট্যাগ অফিসারকে তিনি পাঠিয়েছিলেন। মোবাইলে ট্যাগ অফিসার জানিয়েছে প্যাকেটে ৪শ গ্রাম ৫শ গ্রাম কম ছিল। এ সময় প্রতিবেদক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেন, যেহেতু অভিযোগটি করেছি আমি,তাই তার সত্যতা প্রমানের দায়িত্বও অভিযোগকারীর, তাই ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব ছিল অভিযোগকারীকে সাথে নিয়ে যাওয়া।তানা করে তিনি কিভাবে কনফার্ম করলেন ৪শ গ্রাম ৫শ গ্রাম কম ছিল। উত্তরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) জানান, তা ঠিক, তবে আমি ট্যাগ অফিসারকে বলেছি লিখিতভাবে প্রতিবেদন দিতে।
এদিকে পুর্বের তালিকায় স্বজনপ্রীতি সহ ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলেও ফের বর্তমান তালিকার ৩৫০ নামের মধ্যে কিছু নাম ভুয়া পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ভেড়িগাও গ্রামের আছকির মিয়ার এবং চোয়াবালী গ্রামের সামারুন বেগমের নাম পিতার নাম বদল করে দুইবার করা হয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯ টায় ভারপ্রাপ্ত ইউএনও উর্মি রায় প্রতিবেদককে জানান, এ ব্যাপারে রবিবার সকালে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি হচ্ছে। সকালে ফোন দিলে তিনি কমিটির তালিকা দিতে পারবেন। রবিবার দের ফোন দিলে তিনি জানান, তদন্ত কমিটির সবকিছু প্রস্তুত হয়ে গেছে,এখন তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেলে তা ইনডোজ করে কমিটিকে দিয়ে দিবেন।
পরে এ আনন্দ টিভি’র মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দেন।
এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে রাজনগরের নবাগত ইউএনও জানান, আমি বিষয়টি জানিনা, তবে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি অফিসে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে এসব চাল প্যাকেট করেন ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে কিছু স্বেচ্ছাসেবী যুবক।।