• ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সংবাদ সম্মেলনে মেয়ে হত্যার বিচার চাইলেন বাবা

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১৬, ২০১৯
সংবাদ সম্মেলনে মেয়ে হত্যার বিচার চাইলেন বাবা

স্টাফ রিপোর্টার: আমার মেয়েকে জোরপূর্বক অপহরন করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে। অত:পর মেয়ের স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা মিলে তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালায়। আমার মেয়ের লাশটিও তারা দেখতে দেয়নি আমাদের স্বজনদের। পুলিশের সহায়তায় দ্রুত দাহ কাজ সম্পন্ন করে আমাদেরকে দাহ কাজের কাছেও ভীড়তে দেয়নি। থানায় মামলা দিয়ে গিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছি। পুলিশের হাতে পায়ে ধরেও কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি। এখন ওই খুনি আসামীরা প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলা তুলে নিতে আমাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমরা প্রাণনাশের আতঙ্কে আছি। আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার বিচার চাই। গতকাল (বৃহস্পতিবার) মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত কথাগুলো কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের জানান নির্মমতার শিকার মাধবী রানী বিশ্বাস (১৮) এর পিতা বড়লেখা উপজেলার আখালিমোরা গ্রামের বাসিন্দা অকিল বিশ্বাস। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অকিল বিশ্বাস বলেন আমি অসহায় দিনমুজুর। আমার ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে মাধবী রানী বিশ্বাস ছিলো ৩য়। তাকে হারিয়ে আজ আমরা চরম অসহায়। আজ আমি ন্যায় বিচারের আশায় আপনাদের স্মরণাপন্ন হয়েছি। তিনি বলেন আমার মেয়ে মাধবী রানী বিশ্বাস (১৮) বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রী কলেজের ইন্টারমিডিয়েট (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। আমার মেয়ে কলেজে আসা যাওয়ার সময় প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত জুড়ী উপজেলার সায়পুর গ্রামের করুণা বিশ্বাসের ছেলে অরকুমার বিশ্বাস (২৫)। চলতি বছরের ৭ মার্চ কলেজের স্বরস্বতি পুঁেজা শেষে আমার মেয়ে মাধবী রানী বিশ্বাস বাড়ি ফেরার জন্য কলেজে গেটের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। এসময় অরকুমার বিশ্বাস দলবল নিয়ে তাকে জোরপুর্বক তুলে নিয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও আমার মেয়ের সন্ধান কোন পাইনি। একসময় জানতে পারি জুড়ী উপজেলার সায়পুর গ্রামের করুণা বিশ্বাসের ছেলে অরকুমার বিশ্বাস আমার মেয়ে মাধবীকে নিয়ে বাহাদুরপুর এলাকায় তার মামার বাড়িতে অবস্থান করছে। আমার মেয়ে মাধবীকে তুলে নেয়ার ২৬ দিন পর অরকুমার বিশ্বাস এফিডেভিট করে তাকে বিয়ে করে। কিন্তু তার বাবা-মা এ বিয়ে মেনে না নেয়ায় নিজ বাড়িতে তুলতে পারছিলো না। পরে দুই পরিবারের এলাকার মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। সামাজিক বিয়ের পর আমার মেয়ের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে অরকুমার ও তার পরিবার। বিয়ের ৫ মাস ৮ দিনের মধ্যে একটি বারের জন্যও আমার মেয়ে মাধবীকে আমাদের বাড়িতে যেতে দেয়নি ওরা। গত ১৮ আগস্ট রাতে আমার মেয়ের স্বামী অরকুমারসহ তার পরিবারের সদস্যরা আমার মেয়ে মাধবীকে মারধর করে। একপর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর তারা আত্মহত্যার নাটক সাজায়। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় প্রচারণা করলেও আমাদের বাড়িতে কোন খবর দেয়া হয়নি। প্রতিবেশি মারফত খবর পেয়ে পরদিন সকালে আমি ও আমার স্ত্রী জুড়ী থানায় গেলে পুলিশ আমাদেরকে মেয়ের লাশ দেখতে না দিয়েই ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে পাঠিয়ে দেয়। আমার মেয়ের গলায় দায়ের কুপ ও গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি জেনে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়। ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে আসার পরও আমার মেয়ের স্বামীর বাড়ির লোকজন আমাদেরকে লাশ দেখতে এবং কাস্ট অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেয়নি। আমি গত ২৫ আগস্ট মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলী আদালতে আমার মেয়ের স্বামী অরকুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করি। মাননীয় আদালত ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই মামলার প্রতিবেদন কোর্টে প্রেরণের নির্দেশ দিলে জুড়ী থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন সরদার ওই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন বলে আমাকে জানান। কিন্তু পুলিশ এখনো কোন আসামীকে গ্রেফতার না করায় এবং মামলা তুলে নিতে আসামীদের লাগাতার হুমকিতে আমাদের জীবন এখন অতীষ্ট হয়ে উঠছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। আসামীরা আমাদেরকে জানায় তারা টাকা দিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাল্টে দিবে বিধায় তাদের আমরা কিছুই করতে পারবনা। মামলার প্রমাণ লোপাটের জন্য তারা আমার মেয়েকে মাটিচাপা না দিয়ে মরদেহ দাহ করে। ওই খুনিরা যেন কৌশলে পার পেয়ে না যায় এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আকুল নিবেদন করছি। সংবাদ সম্মেলনে অকিল বিশ্বাসের স্ত্রী ছবিতা বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন।