মৌলভীবাজারে কলেজ ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু; স্বজনদের দাবী পরিকল্পিত হত্যা

কাইয়ুম সুলতান: মৌলভীবাজারে সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী শাহ মোছাঃ নাঈমা আক্তারকে সহযোগী সহ ইমরান পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্নহত্যা নাটক সাজিয়েছে বলে দাবী করছেন নাঈমার পরিবারের স্বজনরা।
নাঈমার স্বজন সূত্রে জানা গেছে- প্রায় ৩/৪ বছর যাবৎ নাঈমার চাচা লন্ডন প্রবাসী আব্দুল কাইয়ুমের বাড়ী-ঘর ও সহায়-সম্পদ দেখাশুনার জন্য বাড়ীতে যাতায়াতের সুবাদে মামাতো বোন মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী ও সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নস্থিত আড়াইহাল গ্রামের শাহ মোঃ শওকত আলীর কন্যা শাহ মোছাঃ নাঈমা আক্তারকে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করছিল ফুফাতো ভাই ইমরান। বিষয়টি নাঈমা তার পরিবারের লোকজনকে জানালে তারা এ ব্যাপারে ইমরানের মা আফিয়া বেগমের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী চাচা আব্দুল কাইয়ুম দেশে এসে মৌলভীবাজার শহরের মুসলীম কোয়ার্টারস্থ ‘ছাবির ভিলা’র নীচতলায় বাসা ভাড়া নিয়ে বোন আফিয়া বেগম, ভাগিনা ইমরান ও তার বোন জামিয়া আক্তার বসবাসরত। নাঈমা আক্তারও প্রায় ২ সপ্তাহ যাবৎ লন্ডন প্রবাসী চাচা আব্দুল কাইয়ুমের ভাড়াবাসায় থেকে কলেজে যাতায়াত করছিল।
একই বাসায় বসবাস করার সুযোগে ইতিপূর্বে নাঈমার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ ইমরান ভূয়া ইমো আইডি খুলে অন্য ছেলের ছবির সাথে নাঈমার ছবি সংযুক্ত করে ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি ছেড়ে দেবে বলে এবং ‘আমার সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করো নতুবা তোমাকে মরতে হবে’ বলে নাঈমাকে হুমকী দিতে থাকে। এতে নাঈমা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং বিষয়টি তার পরিবারের স্বজনদেরকে জানায়। পরবর্তীতে গত ২২ মার্চ রাতে ইমরান নাঈমাকে আবারও হুমকি দেয় যে তার অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে, ফেসবুকে ও লোকসমাজে প্রকাশ করে দিবে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে প্রবাসী কাইয়ুম ইমরান কে শাসিয়ে দেন।এ কারনে ইমরান, জামিয়া ও আফিয়া বেগম মিলে নাঈমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে গলায় ওড়না বেধে ডাইনিং রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বোন লুতফা বেগম ডাইনিং রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে নাঈমার লাশ ঝুলে থাকতে দেখে চিৎকার দিলে বাসার অন্যান্য লোকজন ও আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে ইমরান, জামিয়া ও আফিয়া বেগম কৌশলে পালিয়ে যায়। এসময় চাচা আব্দুল কাইযুম মোবাইল ফোনে নাঈমার স্বজনদেরকে ও মৌলভীবাজার মডেল থানাকে ঘটনা অবহিত করেন। খবর পেয়ে নাঈমার স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে ডাইনিং রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে নাঈমার লাশ ঝুলে থাকতে দেখেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নাঈমার লাশ নামিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে নাঈমার লাশ তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। লাশ দাফন শেষে নাঈমার ভাই শাহ মোঃ বুরহান উদ্দীন মৌলভীবাজার মডেল থানায় হত্যামামলা দায়ের করতে গেলে, হত্যামামলা রেকর্ড না করে ঘটনার ৩ দিন পর গত ২৬ মার্চ পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা (নং- ২৪) রেকর্ড করে। গত ২২ মার্চ সকাল ৭টার দিকে নাঈমার ঝুলন্ত লাশ দেখার পর থেকে অভিযুক্ত ইমরান আহমদ, তার বোন জামিয়া আক্তার ও ফুফু আফিয়া বেগম পলাতক রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান করেছি, গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।