• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

দেশপ্রেমিক দুর্নীতিবাজ শব্দ দুটো সাংঘর্ষিক নয় কি ?

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮

আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় দেশপ্রেম কি ? আমার বিশ্বাস আমরা সাজাইয়া গোছাইয়া ছন্দে ছন্দে কথা বলতে শুরু করলে তা আর শেষ হবেনা । আমরা তো আবার কথা বলার সুযোগ পেলেও দাড়ি কমা ভুলে গিয়ে সেই ৫২, ৫৪, ৬৬, ৭১, ৯০ সব আন্দোলনকে সাক্ষী রাখি। বক্তব্যের শেষান্তে বলি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এখানেই শেষ করলাম। একটি বার কি চিন্তা করি আমাকে কি প্রশ্ন করা হয়েছিল ? সব কিছুতেই আমাদের তাড়াহুড়া ? আমরা কেন এতো ইমোশোনাল ! কোন বিষয় বোধগম্য হবার আগেই আমরা ঝাঁপ দেই ? কেন একজনের কথা শেষ না হওয়ার পূর্বেই অনুমতি না নিয়েই নিজের বক্তব্য শুরু করে দেই ? কথায় কথায় কেন সেই একি কথা এই দেশ আমার, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আমি শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাই নই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কেন আমরা কাজে কাজী না হয়ে দাঁড়ি রেখে কাজী হওয়ার দৌঁড়ে দিন কে রাত আর রাতকে দিন করছি। যদি কারো ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের চেষ্টা বা সুপরামর্শ দেন তাহলে তো আপনি মহাবিপদে পড়েছেন। আপনাকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়া হবে ‘তুমি জানো কাকে কি জ্ঞান দিচ্ছ’? আমি বি.কম অনার্স, এম.কম আরো কত ডিগ্রি অভিজ্ঞতার সয়লাব । আমি তোমার সিনিয়র, সিনিয়রদের জ্ঞান দিতে নাই তা জানা নাই? আজকাল জুনিয়র সিনিয়র সমাজে একটা বিরাট সমস্যা ! সিনিয়রদের কোনো ভুল জুনিয়ররা ধরতে পারবে না। এইসব প্রশ্নগুলো আজ অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু সমাধান কোথায়? আমরা কি একটি বার চিন্তা করি আমরা যেসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছি আমাদের আচার আচরণ কর্মে তার প্রতিফলন ঘটছে কি? যদি কর্মে তার প্রতিফলন না ঘটে তাহলে এসব প্রশ্নের মানে কি কিংবা এসব দাবীর মানে কি?

ছোট্ট একটি স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল যদি ও প্রাসঙ্গিক নয়। আজ থেকে ১৫ বছর পূর্বে লন্ডনে আসার পর আমি যখন কাজের জন্য ইন্টারভিউ দেই। আমি সবে মাত্র লন্ডনে এসেছি ,রাস্তা ঘাঠ জানা নেই, কোন ট্রেন কোথায় যায় , একা যেতে গিয়ে যদি সময় মত ইন্টারভিউতে উপস্থিতি ব্যাহত হয়, সেজন্য আমার স্ত্রীও সেই দিন আমার সঙ্গে ছিলেন । যাহোক ইন্টারভিউ দিলাম হাসপাতালে,কাজও হল। দুই সপ্তাহ পরে কাজে যোগ দিলাম, আমাকে ট্রেনিংয়ে পাঠানোর আগে আমার ডেপুটি ম্যানেজার, প্রাথমিক ভাবে আমার ডিপার্টমেন্ট সহকর্মী আমার কর্মক্ষেত্র এবং হাসপাতাল সম্পর্কে একটু ধারণা দিতে শুরু করলেন। আমার ম্যানেজারকে স্যার বলে সম্ভোধন করায় তিনি আমাকে বললেন তুমি আমাকে স্যার বলে ডাকছো কেন? আমার নাম পিটার কারকাম, তুমি আমাকে পিটার বলেই ডাকবে। এ ছাড়া আমাদের অফিসে আমার ম্যানেজার পিটার কারকাম আসার পর আমি তাকে সম্মান জানাতে প্রায়ই দাঁড়িয়ে যেতাম, আমার এমন আচরণে পিটার আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করলো আমি রুমে ঢুকলে তুমি দাঁড়িয়ে যাও কেন ? আমি বললাম তোমাকে শ্রদ্ধা করি এই জন্য। আমার ম্যানেজার আমাকে বললো ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি তুমি আমাকে সম্মান কর, তোমাকে দাঁড়িয়ে বার বার সেটি প্রমাণ করতে হবে । আপনাদের উৎসাহিত করছি না বিদেশের কালচার ফলো করার জন্য। সম্মান শ্রদ্ধাবোধ ভালোবাসা দেশপ্রেম মানবপ্রেম যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার মনের গহীন থেকে প্রকাশ পায় ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি উঠে বসে শুয়ে কদম্বুচি করেও তা প্রমাণ করতে সক্ষম হবেননা। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক দেশের একটা নিজস্ব রীতি রেওয়াজ আছে। কিন্তু শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বিশ্বের সাথে আমাদের তাল মিলিয়েই চলতে হবে।

দেশ প্রেম নিয়ে কথা বলছিলাম। আমাদের প্রধান সমস্যা বিষয়বস্তু ঠিক রেখে আলোচনা সমালোচনা করতে গিয়ে প্রায়ই আমরা লাইনচ্যুত হয়ে পড়ি। আমার বেলায়ও তার ব্যতিক্রম দেখছিনা। আচ্ছা দেশপ্রেম আর দুর্নীতি শব্দ দুইটা অনেকটা সাংঘর্ষিক নয় কি? আপনারা কি বলেন? যদি মনের গহীন থেকে আপনার মধ্যে দেশপ্রেম, দেশাত্ববোধ থাকে অনেকট যেমন লাইলি-মজনু, শাজাহান-মমতাজের ভালোবাসার মত, তাহলে আপনি দুর্নীতি নামক ক্যান্সার অপকর্মের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন না। দেশের প্রতি আপনার ভালোবাসা, দেশপ্রেম, দেশাত্ববোধ যদি হয় ঐ প্রেমিক যুগলের মত সারাদিন ডেটিং শেষে একজন আরেক জনের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার বেলায় বলছেন -তোমার জন্য সাগর নদী বন জঙ্গল পাড়ি দিতে পারি ! প্রেমিকা বলছে ,ঠিক আছে -কাল সকালে সময় মত আসিও তোমার জন্য অপেক্ষা করতে আমার ভাল লাগেনা! প্রেমিক বলছেন আমি আসবো ডার্লিং কিন্তু যদি বৃষ্টি হয় তাহলে একটু দেরি হবে। তাই বলছি দেশের প্রতি আপনার ভালোবাসা যদি ঐ প্রেমিক যুগলের মত এতটাই দুর্বল হয় যে সাগর পাড়ি দিতে পারবেন কিন্তু বৃষ্টি হলে একটু দেরি হবে তাহলে আপনি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এইরকম দেশপ্রেমিকের ভিড় দেশে বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে !

আমরা এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি যে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার কু-মতলবে দেশের গন্ডি ভেদ করে বহিঃর্বিশ্বে আমাদের আত্মসম্মান বোধ বিসর্জন দিয়ে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে মারামারি শুরু করেছি। একটু সময় নিয়ে আমাদের চিন্তা করা কি উচিৎ না কিসের জন্য আমরা একজনের টাই ধরে অন্যজন টানছি। বেশ কিছুদিন পূর্বে আমেরিকান প্রবাসী রম্য লেখক বশির আহমেদ তাঁহার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে একটি ভিডিও ক্লিপ আপ্লোড দিয়েছেন যা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমেরিকাতে প্রবাসী
বাঙালিরা বাঙাল স্টাইলে দাঙ্গাহাঙ্গামা করছেন। পুলিশ এসে এইসব তামাশা দেখে ইংরেজিতে বলতেছে এই প্রাণী গুলো কোন গ্রহ থেকে এসেছে ? বড়ই হাসির, লজ্জার বিষয় নয় কি ?
আবেগি স্বরে শুধু শুধু মুখ দিয়ে দেশকে ভালোবাসি এটাই কি দেশ প্রেম? নাকি এর সংজ্ঞা ভালবাসার থেকে আরও বেশি কিছু? প্রায় শুনতে পাই জাতি হিসাবে আমাদের দেশপ্রেমের বড়ই অভাব। বিষয়টা কি সত্যিই তাই? আসলেই দেশপ্রেমের অভাব আজ সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত। আমাদের অনেক দেশপ্রেমিক বন্ধু আছেন যারা দেশকে অনেক ভালবাসেন,দেশের জন্য প্রাণ দিতেও তাঁরা প্রস্তূত, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতিশ্রূতি করাটা সহজ কিন্তু এর সফল ও কার্যকর বাস্তবায়নে আমরা প্রায়ই হোঁচট খাচ্ছি। জাতীয় স্বার্থে সবাই এক কাতারে দাঁড়ানোর নামই দেশ প্রেম। সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করা আর ব্যর্থতাকে দেখিয়ে দেয়ার নামই দেশপ্রেম। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয় নিজের আদর্শকে মনেপ্রাণে ধারণ করে যুক্তি মেধা দিয়ে দেশের প্রতি বাস্তবতার নিরীখে আলোচনা সমালোচনার নামই দেশপ্রেম।

আরো একটি উদাহরণ দিতে চাই। বছর পূর্বে যুক্তরাজ্য (ব্রিটেন) ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকবে কি থাকবে না এই প্রশ্নে রেফারেন্ডাম গণভোট হল। সমগ্র বিশ্ব ঐতিহাসিক ঐ গণভোট দেখল। বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন তাঁহার নির্বাচনী ইস্তেহারে জনগণকে কথা দিয়েছিলেন তার দল নির্বাচিত হলে পরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকা না থাকার পক্ষে তিনি গণভোটের মাধ্যমে জনগণের দাবির সফল বাস্তবায়ন করবেন। যেমন কথা তেমন কাজ, প্রধানমন্ত্রী ও তার দল বিরোধীদল লেবারপার্টি সহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ব্যক্তি বিশেষ ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে সমগ্র দেশে ক্যাম্পেইন করল। গণভোটের রেজাল্ট সকল রাজনৈতিক দলের যুক্তির বিপক্ষে চলে যায়। বেশীরভাগ জনগণ রায় প্রদান করে ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তাৎক্ষণিক ভাবে তারা পদত্যাগ করলেন এই জন্য যে দেশকে তাঁরা যে পথে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন ব্রিটিশ জনগণ গণভোটের মাধ্যমেই তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বললেন- আই লাভ দিস কান্ট্রি, আমি মনে করি এই দেশে সঠিক নেতৃত্ব প্রয়োজন । যদিও আমিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা ভাবনা ছিল ব্রিটেন উইল বি মোর স্ট্রংগার উইথ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। আমি জনগণের রায়কে সম্মান জানাই। দেশের জন্য, দেশপ্রেমের জন্য, জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে ভদ্রলোক সময় নেননি বা পিছু হাঁটেননি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরণের একটি পরিস্তিতি মোকাবেলা করতে কত যে প্রাণ চলে যেত আপনারাই বেশি জানেন। তাই যা বলতে চাচ্ছি কাজ দিয়েই দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

দেশের রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি প্রতিরোধে অঙ্গীকার করা হয়। কিন্ত একটি ব্যালান্স রাজনৈতিক পরিবেশ ও কার্যকর বিরোধীদল না থাকায় দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি উদ্যোগ জোরদার করা কার্যকর ভাবে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। ঘুষ লেনদেন সরকারি ফান্ড আত্মসাৎ ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ আমাদের দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। ঘুস অনুপার্জিত আয় ,কালো টাকা ,চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অর্জিত সম্পদ আয় রোজগার সম্পর্কে সর্বস্তরের নাগরিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি বেসরকারি ব্যবসায়ি কর্মকর্তাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে যেখানে ক্লিক করলেই তাদের সম্পর্কে একটি সঠিক তত্ত্ব পাওয়া যাবে। দুর্নীতি তদন্ত অনুসন্ধান জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে মন্ত্রী আমলাসহ যেকোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের নজির স্থাপন করতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের উৎস গুলো বন্ধ করার লক্ষ্যে অনলাইনে টেন্ডারসহ বিভিন্ন সেবা খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার জোরদার করতে হবে, আধুনিক প্রযুক্তির যথাযত তত্বাবদানের মাধ্যমে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী আক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ।

সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকার বিভিন্ন ধরনের আইন করে ও দুর্নীতি দমনে খুব একটা এগোতে পারেনি। তিনি ঠিকই বলেছেন, সরকারের চেষ্টা অব্যাহত ছিল আছেও কিন্তু দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে অনলাইনে অর্থ লেনদেন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং সরকারের সর্ব ক্ষেত্রে যদি এব্যবস্থা চালু করা । এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবাল মাল অব্দুল মুহিত তিনি অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন,বলেছেন আমি সিলেটের একটি কলেজের সভাপতি ছিলাম। ঐ কলেজে আগে যেখানে ভর্তি কার্যক্রম থেকে আয় হতো ৮ লাখ টাকা সেখানে যখন অনলাইন পদ্ধতি ভর্তি চালু করা হলো সেই আয় বেড়ে হলো ৮৩ লাখ টাকা। অনলাইনে লেনদেন হলে চুরি ঠেকানো সম্ভব। সরকারের সকল বিভাগকে স্ব অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব কাজের ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি চালু দুর্নীতি প্রতিরোধে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি এই ধরণের একটি ক্যান্সার ব্যাধিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশপ্রেমে উদ্বদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বার্থে দেশের কল্যাণে একযোগে কাজের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ নির্মূলে সরকার রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ব্যক্তি পরিবার সমাজ দায়িত্বশীল ঐক্যমত্য প্রয়োজন। দেশের প্রচলিত আইন নিয়ম নীতির সঙ্গে দুর্নীতি দমনকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প আমি খোঁজে পাচ্ছি না। সমাজ থেকে দুর্নীতি নামক এই ক্যান্সার ব্যাধিকে নির্মূলে এবং এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও জনগণের প্রচেষ্টার একটি সম্মিলিত সংমিশ্রণ প্রয়োজন। সর্বক্ষেত্রে সর্বমহলে নীতি নৈতিকতার যে চরম অধঃপতন হয়েছে তা থেকে আমাদের নিজেদেরই উত্তরণ ঘটাতে হবে।
সামনের দিনগুলোতে এ দেশে থাকবে না ক্ষুধা দারিদ্র্য বেকারত্ব অশিক্ষা বঞ্চনা । দেশে বিরাজ করবে সুখ শান্তি সম্প্রীতি সমৃদ্ধি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে, যা অর্জনে রাষ্ট্রের ভূমিকা হবে প্রধান ।

কেবল আইন প্রয়োগ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন নির্মূল করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যাতে নাগরিকরা চরিত্রনিষ্ঠ হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশপ্রেমে কাজ করে। সততা ও নিষ্ঠার চর্চাকে সমাজে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। সারা বছর রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ করে ঘুষ দুর্নীতি কুকর্ম করে প্রতিবছর একটি উমরা একটি হজ্জ্ব পবিত্র মক্কা মদিনা ভ্রমণ করলেই কি আমাদের অসৎকর্ম মোচন হবে ? এই ধরণের হীনচিন্তা ভাবনাই আমাদেরকে দুর্নীতির সাগরে ডুবিয়ে রেখেছে। মরহুম সমাজ কল্যান মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী সাহেব রেগে গিয়ে প্রায়ই খবিস গালি দিতেন , কেন দিতেন তা বোধগম্য! আমাদের চিন্তা চেতনা বড়ই সস্তা যা অনেকটা আমার সহকর্মীর কাছ থেকে শুনা আফ্রিকার সেই হাসির জোকস এর মতো, আফ্রিকাতে এক চোর রাতে বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে অনেক কৌশলে মালিকের বাসায় ঢুকার পর যে রুমে চুরি শুরু করবে সেখানে গিয়ে প্রথমেই তার চোখে পড়লো যীশু ক্রিস্টের বড় ছবি দেয়ালে ঝোলানো । চোর প্রথমেই একটি চাদর খুঁজে নিয়ে এসে যীশু ক্রিস্টের সেই ছবিটি আবৃত করে ঢেকে রাখল যাতে যীশু ক্রিস্ট না দেখেন সে চুরি করছে। আমাদের চিন্তা চেতনা নৈতিকতা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ঈমান আকিদা, আমল এতটাই হালকা হয়েছে যে এর থেকে বের হয়ে হতে পারছিনা।
যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত অপরিপক্ক মনের গহীনে দেশপ্রেম ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি হবে না, আমাদের মধ্যে মানুষ্য উপলব্ধি কাজ করবে না যে আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেরিত। মানুষ হিসাবে আমরা সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত। বনের প্রাণী আর আমাদের মধ্যে অনেক ফারাক। আমাদের সকল কাজের হিসেব-নিকেশ হচ্ছে যা ডে অফ জাজমেন্টের দিনে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনেকটাই সেই ‘ সাত খন্ড রামায়ণ পড়িয়া সকালে আবার প্রশ্ন ছুড়া সীতা কার বাপ ,এই রকম একটি অবস্থা ।

আমাকে শেষ করতে হবে। শুরুতে নিজেই বলেছি শুরু করলে আমরা আর শেষ করতে চাইনা। আপনাদের ধৈর্য্যচ্যুতি আর ঘটাতে চাইনা । ইতিমধ্যে আপনার হয়ত ভাবছেন এই ভদ্রলোক বেশি কথা বলছেন। যা বলতে চাই ‘বিচার মানি তাল গাছ আমার’ এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। আপনার প্রতিবেশী কেমন আছেন ? কি করছেন, তাহার সুখে দুঃখে , শুধু সুখে নয়, ঈদে চাঁদেও নয় ,সব সময় সু- সম্পর্ক অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এই পৃথিবীটা আমাদের সকলের জন্য হোক বসবাসযোগ্য যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকবে অটুট যা আমাদের চিন্তা চেতনায় হবে দৃশ্যমান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে আমাদের ভূমিকা হতে হবে সর্বজন প্রসংশিত। আর এই বিষয় গুলো যদি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে আর কোনো সন্দেহ নেই আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব আছে। একজন সুনাগরিক দেশপ্রেমিক কোনো ভাবেই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে না। এই বিশ্বাস নিয়েই কাজ করতে হবে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।

নজরুল ইসলাম
জার্নালিষ্ট ,ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস, লন্ডন
আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন
মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোসাইটি ইউনাটেড কিংডম।