• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বড়লেখায় সাংবাদিকসহ ৩০০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা

admin
প্রকাশিত আগস্ট ২০, ২০১৯
দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বড়লেখায় সাংবাদিকসহ ৩০০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা

কাইয়ুম সুলতানঃ অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারকৃত সাংবাদিককেই করেছে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার প্রধান আসামী। তেলেসমাতি এ কান্ডটি করেছে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার পুলিশ। ঘটনা জানতে পেরে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন প্রধান আসামী ওই সাংবাদিক।
বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নস্থ দাসেরবাজারে গত ১০ই আগস্ট শনিবার সকাল ১০টার দিকে দাসেরবাজারস্থ সবজি শেডে এক সালিশ বৈঠক বসে। দাসেরবাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সালিশ বৈঠকে উভয়পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশসহ উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে উক্ত মামলাটি দায়ের করে। দাসেরবাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সালিশ বৈঠকে দাসেরবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলেমান আহমদ বাদশা, দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজী মুছব্বির আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, নুরই মিয়া, আব্দুর রহমান, জিয়াউর রহমান, প্রবাসী বদই মিয়া, রফিক উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় গত ১৯ মে (১৩ রমযান) রবিবার ইফতারের পূর্বমুহুর্ত থেকে সুড়িকান্দি গ্রামের আবদুল করিম ও লঘাটি গ্রামের প্রতিবন্ধী মান্না মিয়ার মধ্যে চলমান বিরোধ মিমাংসার লক্ষ্যে সালিশ বৈঠকে প্রতিবন্ধী মান্না মিয়া শুনানীকালে একই কথা বারবার বলার কারণে অপরপক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, “বিরোধীয় বিষয়টি অন্য কারো কাছ থেকে জানলে ভালো হয়, যেহেতু মান্না মিয়া বিষয়টি সঠিকভাবে বলতে পারছেনা”। এর প্রেক্ষিতে প্রস্তাবে আপত্তি জানানোকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সুড়িকান্দি গ্রামের আতাউর রহমান (কালা কটই), সামছুল ইসলাম, আমানুর রহমান, আব্দুল করিম, সুমন আহমদ, সালমান, আব্দুল কাদির গংরা সালিশ বৈঠক বর্জনপূর্বক সংঘর্ষের ঘোষণা দেয়। এসময় উত্তেজিত লোকজন দাসেরবাজার বণিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক সোনালী খবর পত্রিকার বড়লেখা উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক মোস্তফা উদ্দিনকে ধাওয়া করলে তিনি দৌড়ে গিয়ে একটি দোকানে ঢুকে ভিতর থেকে সাটার বন্ধ করে আতœরক্ষা করেন এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্নজনকে ফোন করে তাকে উদ্ধারের অনুরোধ জানান।
অপরদিকে, উত্তেজিত উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কুলাউড়া-চান্দগ্রাম মেইন রোডে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় আরও কয়েক ব্যক্তি থানায় ফোন করে ঘটনা জানালে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা শুরু করে। তা সত্তেও উভয়পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সংঘটিত এ সংঘর্ষে সুড়িকান্দি ও লঘাটি গ্রামের বেশ কয়েকজন ছাড়াও মধ্যস্থতাকারী সোলেমান মিয়া, বড়লেখা থানার এসআই সুব্রত কুমার দাস ও কনস্টেবল তোহেল মিয়াসহ প্রায় ৪০ জন কমবেশী আহত হয়। ভাংচুরের শিকার হয় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৮/১০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। তবে পুলিশের দাবী ৮১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৪টি টিআর শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিক মোস্তফা উদ্দিন অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন।
এদিকে, পুলিশ আহত হবার ঘটনায় এসআই সুব্রত কুমার দাস বাদী হয়ে সাংবাদিক মোস্তফা উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে নাম উল্লেখিত ৫০ জন ও অজ্ঞাতনামাসহ ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামী করে বড়লেখা থানায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা (নং-১১, জিআর- ১৬৯) দায়ের করেন। এসআই শরীফ উদ্দিনের তদন্তাধীন এ পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার কারণে গ্রেফতার আতংকে প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে লঘাটি ও সুড়িকান্দি গ্রাম। পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে না পারলেও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়- উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য পুলিশ উভয়পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান নেয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্যদের সাথে দুজন পুলিশও আহত হয়েছে। বিবদমান কোন পক্ষ পুলিশের উপর হামলা করার প্রশ্নই আসেনা। কাজেই, এটা কোনভাবেই পুলিশ অ্যাসল্ট হিসাবে গণ্য হতে পারেনা। তাছাড়া, এসআই সুব্রত কুমার দাসের দায়েরী পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় এমন অনেককে আসামী করা হয়েছে- যারা ঘটনার দিন এলাকায়ই ছিলনা। অনেকে এসময় অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। কেউ কেউ এলাকায় থাকলেও ঘটনাস্থলেই যায়নি। কেউ কেউ ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান নিয়েছিল দর্শকের ভূমিকায়। তাছাড়া, পুলিশ ৫০ জনের নাম-ঠিকানা জানলো কিভাবে ? অবশ্যই উভয়পক্ষের এক বা একাধিক ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশকে এসব নাম-ঠিকানা সরবরাহ করেছে। এ কারণেই ওই সাংবাদিকসহ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলনা এমন অনেককেই পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় আসামী করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে বিষয়টি প্রমানিত হবে। এদিকে, অবরুদ্ধ থেকে পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারকৃত সাংবাদিককে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় প্রধান আসামী করার মতো তেলেসমাতি কান্ডে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার সাংবাদিকদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ওসি ইয়াসিনুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আসামীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িতরা অচিরেই সনাক্ত হবে।