• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বন্ধ থাকা পাবলিক লাইব্রেরী খোলার নেপথ্যে…

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
বন্ধ থাকা পাবলিক লাইব্রেরী খোলার নেপথ্যে…

শরীফ খালেদ সাইফুল্লাহ

দীর্ঘদিন  বন্ধ থাকা আলোর প্রদীপ জেলার জ্ঞান পিপাষুদের তৃষ্ণা মিঠানোর ঠিকানা পাবলিক লাইব্রেরী মৌলভীবাজার কে খোলে দেয়া ও সচল করার লক্ষে সচেতন নাগরিক ফোরাম মৌলভীবাজার (সনাফ) এর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রধানের পর দ্রুত খোলে দেয়া হলো।

এক সময়ের পাঠক মূখরিত লাইব্রেরী আজ বনি আদম শূণ্য, নেই তার সেই আগের জৌলুস জং পড়েছে গ্রিলে গ্লাসগুলিতে ময়লা। বইয়ের তাড়িয়া/সকেসের রং বিবর্ণ ও ফেকাশে, মূল্যবান তাফসীর গ্রন্হ এলোমেলো নেই কোন শ্রেণীবিন্যাস! বিশ্বকোস,ইতিহাস গ্রন্হের কাভার ছিঁড়া ফাড়া। অবহেলা আর অযত্নে লক্ষ লক্ষ টাকার বই-কিতাব প্রায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম।

সঠিক পরিচর্যা আর নেতৃত্বের অভাবে নন্দিত এ পাঠশালা হারিয়েছে অনুসন্ধিৎসু পাঠক।আজকের বৈশ্বয়িক প্রতিযোগিতার সমাজে বড়ই প্রয়োজন জ্ঞান বিকাশের এ ইনিস্টিউটের ব্যাপক ডিজিটাইজড করণ। দির্ঘ অচলাবস্থা আর পাঠক বিমোখতা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন কিছু বাজেট মঞ্জুর করে মৌলভীবাজারের পাবলিক লাইব্রেরীকে ঢেলে সাজানো।

একটি জাতী ততক্ষণ সমৃদ্ধ বিবেকের জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেনা যতক্ষণ না সে নিজেকে সর্বদা জ্ঞানপিপাসু হিসেবে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলে। সে জন্যে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে বই পড়া, বিশ্ব সভ্যতায় তারাই বেশি অগ্রগামী যারা যত বেশি বই পড়ে।

আমাদের সমাজে খালি কলসি নিয়ে শুধু ঢাকডুল বাজানোতেই ব্যাস্ত কিছু পাঠক, দু’লাইন লেখতে পারলেই বেশ হলো এবার বেচারা লেখক-গবেষক,কবি,প্রাবন্ধিক,সাংবাদিক,সম্পাদক,সমাজসেবক,মানবাধিকার নেতা, প্রকাশক ইত্যাদি লকব দিয়ে লম্বা একটি ভিজিটিং কার্ড সাথে ই-মেইল,মোবাইল নাম্বার,বাসা ও অস্হায়ী অফিসের ঠিকানাতো থাকবেই, এই হলো বর্তমান সমাজের তথাকথিত কিছু পাঠকের হাল হকিকত।

ভাষা জ্ঞান মহান আল্লাহ প্রদত্ত এক বড় নেয়ামত বা পুরস্কার রাসূল সাঃ বলেন নিশ্চয় কথার মধ্যে যাদু আছে। সে কথা হতে হবে অর্থবহ সাহিত্য রসে ভরপুর আর স্হান কাল পাত্র অনুযায়ী,কথার উচ্চারন ভঙ্গি হতে হবে মধুমাখা পরিপাটি ও শ্রুতিমধুর এমন কথায় কেবল যাদু থাকবেই। অপর এক হাদীসে জ্ঞানকে আলোর সাথে আর মূর্খতাকে অন্ধকারের সাথে উপমা দেয়া হয়েছে যেমনঃ জ্ঞানই আলো, মূর্খতাই অন্ধকার- আল হাদীস।

আরব মনিষিরা বলেছেন জ্ঞানের জন্য প্রয়োজনে চীন দেশেও ভ্রমন করো। বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মহাকাশেও যাচ্ছেন জ্ঞান আহরন করতে, সাগরের তলদেশে যাচ্ছেন গবেষনার কাজে। উন্নয়নশীল দেশের ইতিহাস খোজলে দৃশ্যমান হবে দিবালোকের মতো যে তারা বই পড়েছে গবেষনা করেছে এবং সেখান থেকে শিক্ষনীয় বিষয়কে নিজের ও সমাজ জীবনে বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ দয়াময় তিনি, যিনি কোরআন শিখিয়েছেন, মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনি মানুষকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন –আল কোরআন। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত ভাষা শিখার মাধ্যমে এই ভাষায়ই গবেষনা করবে, নিজে শিখার পর পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে উপকৃত করবে।

যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত তাদের মননশীলতা রুচী চিন্তা স্বপ্ন চেতনা তত বেশী প্রখর, শিক্ষাকে পণ্য মনে করলে সে শিক্ষায় শিক্ষার্থীর উপকার নয় বরং চরিত্রহীনতার পথেই ঠেলে দিতে পারে। বর্তমান সমাজে নকল আর প্রশ্ন ফাসের মাধ্যমে শিক্ষার সনদ পাওয়া গেলেও আদর্শিক শিক্ষা কেবল বইতেই থেকে যায়।ফলে সে সকল কাগুজে সনদ দারী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনতো দূরে থাক পুরোনো সমাজের অবশিষ্ট ভাঙ্গা ছেড়া ইতিহাসও মুছে যাবার পথে তাদের সকল কূকর্মের মাধ্যমে।

বহু কথা বহু ব্যথা, মৌলভীবাজার জেলা দেশের মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা কিন্তু আমাদেরকে বহুকাল থেকে আজো নিভো নিভো বাতির নীচে বাস করতে হচ্ছে তাও আবার হাসিখুশির মধ্য দিয়ে!

প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের মনন খুবই সরল, সহজ জীবন এখানকার অধিবাসিরা গ্রহন করেছে আদিকাল থেকে তবে যখন গর্জে উঠে তখন তাদের থামানো বড় কঠিন। নিজের নাকে খতদিয়ে অন্যের যাত্রা শুভ করার ত্যাগী মানসিকতা মৌলভীবাজার বাসির পুরোনো অভ্যাস যা সিলেট বাসি সহ পুরো দেশ-বাসি কম-বেশি ওয়াকিবহাল। আমরা মেডিকেল কলেজ চেয়েছিলাম বলা হলো পেয়ে যাবো কিন্তু পাইনি?২০১৭ সালে মৌলভীবাজারের রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করে অদৃশ্য কারনে স্হগিত করা হলো,জানা গেলো কোন লাইফ মেম্বার নয় এক বাৎসরিক সাধারন সদস্য মামলা করেছেন সেই মামলা আজো ঝুলছে কোর্টে দেখার নেই কেহ। পরে রেডক্রিসেন্টের মৌলভীবাজার ইউনিটে অনির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলো এবং তা আজো চলমান আছে।

আত্মাকে সমৃদ্ধ করতে, নিজেকে কলুষমুক্ত ও আলোকিত হৃদয়ের বিত্তবান হিসেবে গঢ়ে তুলতে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। আমাদের সমাজে আজ অপরাধ এক মহামারি রূপ নিয়েছে, সামাজিক বন্ধন নেই বললে ভুল হবে সেখানে বলতে হবে যে সামাজিক বন্ধন বলতে পূর্বে এমন কিছু ছিলো বলে মনেই হয়না! এ জাতীর ডিজিটাল সন্তানরা আই টি বিদ্যা ছাড়াই তারা স্ব-ঘোষিত ডিজিটাল, আফসোসের শেষ নেই আমাদের নতুন প্রজন্ম যাচ্ছে কোন পথে? সে পথ কি মসৃণ? না কণ্টকাকীর্ণ? ওরাতো লম্বা চোল আর খোশা খোশা দাড়ি ছিড়া প্যান্ট আর আই ফোন নিয়ে ব্যাস্ত সাথে একটি হোন্ডা হলেতো তারা নিজেকে নাসার বিজ্ঞানী মনে করে।

ইতিহাস জানেনা আবার ইতিহাস পড়তেও চায়না! দুঃখ আছে অনেক এ জাতির কপালে। আল্লাহর একক সত্বাকে যারা চ্যালেঞ্জ করে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্হায় ডারউইনের মতবাদ সংযোজন করেছেন তারা একদিন হয়তো কঠিন হিসাব কষতে হবে,পাঠ্যসূচীতে ইসলাম বাদ দিয়ে যৌন শিক্ষা দিচ্ছেন কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের কিন্তু হিসাব মিলান নি তাতে কার লাভ কার ক্ষতি?

দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় একশো কোটি মানুষ দেখেছে বাংলাদেশের ডেপুটি কমিশনার বা DC অফিস সহকারী মেয়ের সাথে চব্বিশ মিনিটের অবৈধ যৌন মিলন করেছেন ঐ নরপশুর কুকর্মের লেশ কাটতে না কাটতে জাতীয় সংসদের আইন প্রণেতা এম পি বাবু উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আপার সাথে কি কুকর্মনা করলেন তা সকলেরই জানা, কারন আমরাতো আইটি বিদ্যা ছাড়া ডিজিটাল পার্সোন হাতে হাতে স্মার্টফোন।

কাবিন নামায় মুসলমানরা কুমারী লেখার সুযোগ হারিয়েছেন সেখানে অবিবাহিত লেখার পরামর্শ বা নির্দেশনা এসেছে, মন্দ কিসে হাজার ধন্যবাদ দেয়াই যেতে পারে কারন এই সত্য উপলব্ধির জন্য মাননীয় উচ্চ আদালতের ভূয়সী প্রশংসা করতেই পারি। তবে মাননীয় উচ্চ আদালত আমাদের পরিবারগুলি বেহায়া আর বেলেল্লা নয় তারা কিন্তু কুমারী লেখতে হবে সে সুযোগ রাখবেন, যে মেয়েরা নিজের বুকের উচু স্হানে গেঞ্জি সাটিয়ে লিখে রাখে “গা ঘেষে দাড়াবেন না” তাদের যা খুশি বলুন।

সময়ের প্রয়োজনে আমাদের যোগ্যতা বাড়াতে ও জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পড়তে হবে বাংলা সাহিত্য,ইতিহাস, বিশ্বকোষ, সমসাময়িক বিষয়ের উপর গবেষণালব্দ,প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা,গল্প,বড় গুনি লেখকদের আত্মকথা, মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির লড়াই সম্বলিত ইতিহাস, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকিয়-উপ সম্পাদকিয়, সমসাময়িক বিষয়ের উপর বিশ্লেষন ধর্মী লেখা। পড়তে হবে সমকালীন বিশ্ব রাজনৈতিক অবস্হার হালচাল ইত্যাদি।

পরিবেশ সবকিছু বদলে দিতে সক্ষম চায়ের দোকানে আপনি বসলে চা’ই পান করবেন আর বইয়ের দোকানে বসলে অন্তত কয়েকটি বইয়ের নাম পড়বেন সেখান থেকে এমন একটি নাম আপনার হৃদয় নাড়াবে যে আপনি সংকল্প করতে বাধ্য হবেন এই বইটি আমি পড়েই ছাড়বো। এভাবে এক এক দুই তিন করে আপনি একদিন হয়ে উঠবেন আদর্শ পাঠক, এবার যদি আপনার পাশে থাকে সমৃদ্ধ কোন লাইব্রেরী তাহলেতো আপনি প্রজাহীন রাজ্যের মূকুটহীন রাজা কে পারে আপনাকে স্মার্টফোন দিয়ে বসিয়ে রাখতে।

সময়ের তালে মানুষ বদলায়না বদলায় মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি, যুগের ভিন্নতায় মানুষ আজ সচেতন তাদের কোন ভাবেই বোকা ভাবা ঠিক হবেনা কারন তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে কাউকি উল্লো বানানো যায়না তারপরও যারা সেই বুকার স্বর্গে বাস করেন তারা নিজেই নিজেকে উল্লো হিসেবে উপস্হাপন করেন।

সচেতন নাগরিক ফোরাম মৌলভীবাজার এর নেতৃবৃন্দ পাবলিক লাইব্রেরী কে সচল করার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার সাথে সাথেই কাজ হলো আমরা ফল পেলাম আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় হলো,জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালিন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ গিয়েছিলাম লাইব্রেরী ভিজিট করতে, দেখলাম পাঠক নেই বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে কারন দির্ঘদিন বন্ধ থাকায় বাথরুম ও এসি সচল নয়।

আশ্চর্য হই জেলা পরিষদের ভিতরে পাবলিক লাইব্রেরী এতোদিন যাবত বন্ধ অথচো বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সমাজ সচেতন জেলা বাসি চুপ ছিলো! সনাফ বরাবরের মতো এবারও জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজের ব্যাপারে প্রতিবাদী হলে পাবলিক লাইব্রেরী সচল করতে মাননীয় জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক উদ্যোগী হয়ে লাইব্রেরীটি জনতার জন্য খোলে দেন। আমরা ধন্যবাদ জানাই জেলার নবাগত DC কে, কারন এম.পি,জেলা পরিষদ,উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন, পৌরসভা কতৃপক্ষ সহ নাগরিক সমাজের বিচক্ষণ ব্যাক্তিবর্গের লাইব্রেরীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বেমালুম আচরন নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানের এ ভান্ডার থেকে যোজন যোজন দূরত্বে নিয়ে যাচ্ছিলো।#সচেতন নাগরিক ফোরাম সবসময়ই নাগরিকের অধিকার ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কর্মসূচী পালন করে জেলাবাসির হৃদয় কাড়তে সক্ষম হয়েছে, ছাত্র-যুবসমাজ সহ সচেতন মহলের কাছে বর্তমান সময়ে সনাফ আস্হার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে।

লেখক-  শরীফ খালেদ সাইফুল্লাহ

লেখক-  শরীফ খালেদ সাইফুল্লাহ