• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বড়লেখায় শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞার কাছে প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত

admin
প্রকাশিত মার্চ ৫, ২০২০
বড়লেখায় শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞার কাছে প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত

মঈন উদ্দিন: একাধিক শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞার বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানাযায় বিভিন্ন সূত্রে। তাঁর ভয়ে শিক্ষককরা প্রতিবাদ না করায় তিনি দিন দিন বোপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। যার কারণে এবার তাঁর হাতে উপজেলার তারাদরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এতে মানসিকভবে ভেঙে পড়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জাফরি (৫০)। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞা ‘সামান্য ত্রুটি’ পেলেই শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান। মূলত শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি অনৈতিক সুবিধা নিতে এভাবে হয়রানি করে থাকেন। তাঁর ভয়ে অনেক শিক্ষকই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। আর প্রতিবাদ করলে তাদের মাসিক বেতন কর্তন, বিভাগীয় মামলা ও এসিআর (গোপন প্রতিবেদন) না দেওয়ার হুমকি দেন।
প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এই ঘটনায় শিক্ষকরা ক্ষোভ ফুঁসে ওঠেছেন। তারা এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তারাদরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জাফরি বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের গভীর নলকূপ ও ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ তদারকি করছিলেন। বেলা এগারোটা ৫৫ মিনিটের সময় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞা ওই স্কুল যান। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জাফরিকে চেয়ারে বসা দেখেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এসময় ওই শিক্ষক তাঁর ক্লাস নেই ও শারিলিক অসুস্থতার কথা বলতেই তিনি তাঁকে মারার জন্যও তেড়ে আসেন। এসময় ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে নিবৃত্ত করেন। শিক্ষা কর্মকর্তার এমন আচরণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জাফরি। পরে সহকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সূত্র জানায়, ঘটনার সময় বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে থাকা বাগমারা সপ্রাবির সহকারি শিক্ষক সুজিত রায়কে প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে মোটরসাইকেলে তাঁর সাথে নিয়ে যান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘আতাউর রহমান জাফরি স্যার বয়স্ক মানুষ। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। বুধবার বিদ্যালয়ের ডিপটিউবওয়েল নির্মাণ কাজ তিনি তদারকি করছিলেন। এসময় টিও স্যার (উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞা) বিদ্যালয়ে আসেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি হ্যাড টিচার জাফরি স্যারকে বাজে ভাষায় কিছু কথা বলেন। এসময় তাকে মারার জন্য তিনি উদ্যত হন। পরে আমরা টিও স্যারকে নিবৃত্ত করি।
খোঁজ নিয়ে গেছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞা চলতি বছরের হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি পুরাতন গাছ এবং বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন নিলাম না করেই বিক্রি করেন। কারণ জানতে চাওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষ্ণুপদ চক্রবর্তীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে শাস্তির ভয়ে ওই শিক্ষক আর মুখ খোলেননি।
এদিকে সম্প্রতি সুজাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবরিন সুলতানাকে লাঞ্ছিতের করেছেন রফিজ মিঞা। সূত্র জানায়, সম্প্রতি শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞা ওই বিদ্যালয়ের পরিদর্শনে যান। এসময় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব শতভাগ না দেওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবরিন সুলতানাকে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার কারণ দর্শানোর নোটিশে প্রধান শিক্ষক সুপারিশ করায় শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকসহ ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এছাড়া তিনি পৌরশহরের সিংহগ্রাম বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ছয়ফুল ইসলামকে তাঁর নিজ অফিসকক্ষে শিক্ষকদের সামনে ‘দেড় টাকার মাস্টার’ বলে তাচ্ছিল্য করে গালাগালি করেন। এরকম একটি ভয়েস রেকর্ড এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘টিও স্যার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এসব বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি সামান্য ত্রুটি পেলেই শিক্ষকদের ‘চোর, বাটপার, বদমাশ’ সহ নানা অশালিন ভাষা গালাগাল করেন। অনেকে ভয়ে প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করলে মাসিক বেতন কর্তন, বিভাগীয় মামলা ও এসিআর (গোপন প্রতিবেদন) না দেওয়ার হুমকি দেন। এজন্য আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস করিনা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞার মুঠোফোনে বুধবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের ওপর ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আপনার কাছে শিক্ষককে মারধরের স্বাক্ষী-প্রমাণ থাকলে আপনি নিউজ করেন।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, রফিজ মিঞা প্রায় ৫-৬ বছর আগে জুড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকাকালে প্রশ্নপত্র বাবদ শিক্ষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে জকিগঞ্জ উপজেলায় শাস্তিজনিত বদলি হন। সেখান থেকে তিনি অনিয়মের অভিযোগে খাগড়াছড়ি জেলায় শাস্তিজনিত বদলি হয়েছিলেন।