• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতাল নিয়ে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ- এর প্রতিবাদ

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতাল নিয়ে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ- এর প্রতিবাদ

ওপেন আই ডেস্কঃ গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, বুধবার বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতাল, মৌলভীবাজার এ একটি নবজাতকের  মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা, টিভি চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছেন বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালের পক্ষে ডাঃ যাকিয়া শহীদ। পাঠকের সুবিধার্থে প্রতিবাদ লিপি হুবহু তুলে ধরা হল

গত ২৭শে নভেম্বর বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু কে কেন্দ্র করে   বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংবাদ গুলোতে  নানারকম ভুল তথ্য সম্বলিত বক্তব্য, খবরাখবর প্রচারিত হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত ঘটনা সবার অবগতির জন্য প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরী মনে করছি।

মিসেস লাকি খানম, বয়স ২৮ বছর, স্বামী জনাব সাহেদ খান, শ্রিরাইনগর,মৌলভীবাজার,  ২৭ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক আটটায় প্রসব ব্যথা নিয়ে বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পর রোগীর স্বামী বলেন- শহরের একটি প্রাইভেট  ক্লিনিকে শেয়ার থাকা সত্ত্বেও উনি এখানে এসেছেন৷কারণ, উনি ওনার স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারি করাতে চান। এরপর,  নরমাল ডেলিভারি করানোর সম্মতি পত্রে স্বাক্ষর দেবার পর চিকিৎসা শুরু হয়। ডেলিভারির এক  পর্যায়ে যখন ওনার স্ত্রী আর চাপ দিতে পারছিলেন না এবং গর্ভস্থ শিশুর হার্টবিট খারাপ হয়ে যায়, তখন রোগীর স্বামী সহ উপস্থিত অন্যান্য স্বজনদের অবগত করা হয়। এমতাবস্থায় আমাকে জানানো হলে আমি হাসপাতালে যাই। রোগীর জরায়ু মুখ পরীক্ষা করে ওনার স্বামীকে জানাই, বর্তমানে শিশু যে অবস্থানে আছে, ওনার স্ত্রী চাপ না দিলে  ডেলিভারি  সম্ভব না। তখন উনি আমাকে অপারেশন করার কথা বললে আমি জানাই, এই অবস্থায় অপারেশন করলে বাচ্চা ভাল নাও থাকতে পারে, এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে। এরপর উনি আবারও জোরালো ভাবে বলেন, আপনি অপারেশন করেন। যা হবার হবে।

অতপর অপারেশনের সম্মতিপত্র ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনের (Risk bond) একটি অনুমতি পত্রেও

উনি সহ তিন জন স্বাক্ষর করেন, যাতে বর্তমান অবস্থায় অপারেশন করলেও বাচ্চা বাঁচার কোন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় বলে অবহিত করা ছিল।

অপারেশনের  পর শিশুটির অবস্থা খুবই মুমূর্ষু ছিল এবং শিশুটি মৃত্যুবরণ করে।

পরবর্তীতে, রোগীর স্বামী এই বিষয়ে নানারকম অসত্য এবং  বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য  প্রচার  করেন।

যেমনঃ

#উনি বলেছেন-ডেলিভারির বিষয়ে আমাদের মতামত চান এবং আমরা ওনার স্ত্রীর সিজারিয়ান প্রয়োজন নাই, নরমাল ডেলিভারি হবে বলে আশ্বাস দেই। প্রকৃতপক্ষে, এই বিষয়ে উনি আমাদের কোন মতামত চান নাই এবং শুরুতেই  জানান যে ,নরমাল ডেলিভারির চান বলে  উনি এই হাসপাতালে এসেছেন এবং নরমাল ডেলিভারির সম্মতি পত্রে স্বাক্ষর করেন,যাতে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে লিখিত ছিল।

# টাওয়েল, মিস্টি আনতে বলা, ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ডেলিভারি হবে- এই ধরনের কোন কথা আমাদের কারো পক্ষ হতে ওনাকে বলা হয়নাই।

#  আমি এসে রোগীকে পরীক্ষা করে  বাচ্চার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানানোর পর উনি সিজারিয়ান অপারেশন চাইলে বাচ্চা ভাল থাকবে বলে কোন ধরনের নিশ্চয়তা  ওনাকে দেই নাই। বরং  অপারেশন পরবর্তীতেও বাচ্চা খারাপ, এমনকি মৃত্যুও  হতে পারে  বলে জানাই। বাচ্চার মাথা ধরে, কান ধরে টানাটানি করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

# শিশুর পোস্টমর্টেম করার ব্যাপারে বাঁধা দেওয়া সহ  ওনাকে  নানা ধরণের ভয়ভীতি প্রদর্শন,  গাড়ি ইত্যাদি উপঢৌকন প্রদান, আপোষের চেষ্টা,ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা – ইত্যাদি অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

#  উনি   রিস্ক বন্ড সহ  প্রতিটি সম্মতিপত্র ভালভাবে পড়ে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর দেবার পরই আমরা  চিকিৎসা দিয়েছি। সুতরাং, অপারেশনের পরে কোন সম্মতিপত্রে ওনার  স্বাক্ষর নেবার যে  অভিযোগ, তা সত্য নয়।

বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতাল মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জের প্রথম বেসরকারী হাসপাতাল, প্রায় পঞ্চাশ বছর  ধরে সদক্ষতা,সততা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে  এই অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যসেবায়,বিশেষ করে প্রসূতি ও নবজাতক সেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে।এটি শহরের একমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল, যেখানে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা দুইজন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সার্বক্ষণিক ভাবে রোগীদের সেবা প্রদান করেন।

প্রতিটি জীবন মূল্যবান। একজন চিকিৎসকের   সর্বোচ্চ মেধা ও  জ্ঞান দিয়ে রোগীকে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করেন। একজন পিতা তাঁর সন্তান হারাবার পর মানসিকভাবে ভেংগে পড়বেন, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।ওনার পরিবারেরর সাথে একজন চিকিৎসক হিসাবে আমিও সমব্যথি।

ওনার স্ত্রীর ডেলিভারির ব্যাপারে প্রথম হতে সবকিছু উনি অবগত ছিলেন এবং ওনার  পূর্ন  লিখিত এবং স্বাক্ষরিত সম্মতি ছিল।প্রকৃত ঘটনা জানা থাকার পরেও  ওনার নানাবিধ অসত্য ও বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য, যা কিছু অনলাইন মিডিয়া এবং পত্রিকায় এসেছে,তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আশা করি, আমার এই বক্তব্য প্রকৃত সত্য তুলে ধরে এই সংক্রান্ত সকল অপপ্রচার ও মিথ্যার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে।

ডাঃ যাকিয়া শহীদ খান

এমবিবিএস ( ঢাকা মেডিকেল কলেজ)

ডিজিও ( ঢাকা মেডিকেল কলেজ)

এফসিপিএস ( অবস এন্ড গাইনী)

কনসালট্যান্ট গাইনী

বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতাল