• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাবা তুমি কাঁদছো যে….

admin
প্রকাশিত জুন ১৮, ২০১৮

লিখার জন্য কম্পিউটারে বসেছি ঠিকই, কিন্তু কি লিখবো? কাকে নিয়েই বা লিখবো? আমি আজ বিভ্রান্ত। আমি বিশ্বাসহীন, আহত, অসহায়। আমি অসহায়ত্বের বন্ধনে আবদ্ধ প্রাণ এক। আমি আজ শঙ্কিত। আমরা আজ আস্তাহীন, ভীত, সন্ত্রস্ত।
ঈদ নিয়ে কিছু লিখতে বসেছিলাম। হ্যা, ঈদ নিয়েই লিখবো। ইকরামের পরিবারের ঈদ নিয়ে লিখবো। চিনতে পারেছেন ইকরামুল হক-কে? সেই যে, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর। রাষ্ট্রীয় খুনিদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছিল যে। রাষ্ট্রীয় খুনি শব্দে আপত্তি আছে? থাকতেই পারে। রাষ্ট্রের পা চাটা গোলাম হলে এমনটা অস্বাভাবিক নয়। কেননা এরকম কাজ রাষ্ট্রের কিছু সুবিধাভোগী, অর্থপিপাসু, মানবতাহীন পশুই করতে পারে। আমরাও কেমন পশুর রাজ্যে বসবাস করছি। মগের মুল্লোক বললেও ভুল হবে না। মাদক বিরোধী অভিযানের নামে রাতের আধারে একটা নিরপরাধ লোককে ডেকে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বলে চালিয়ে দিলো। অথচ রাষ্ট্রের কর্তারা বলেন, মাদক বিরোধী অভিযানের মতো এতো বড় একটা কাজ করতে গেলে এরকম দু’একটা ভুল হতেই পারে। কেমন নির্লজ্জেও মতো কথা! আদোতে এ রাজ্যে ন্যায়বিচার নাই।
ইকরামুল তো চলেই গেল। তথাকথিত দু’একটা ভুলে ঝরে গেল একটা প্রাণ। রাষ্ট্রের একটা ভুলের কারণে একটা পরিবার হারালো অভিভাবক। বুলেটের আঘাতে ইকরামুলের ঝাঝরা বুক দেখেছে সবাই। কিন্তু সেই বুকে লালন করা হাজারো স্বপ্ন ভাঙার শব্দ কি কেউ শুনেছে? ইকরামুলের হত্যার সাথে ভেঙে গেছে মেয়েদের সকল আশা, আকাঙ্কা। তারা চিরতরে হারিয়েছে তাদের ভরসার জায়গাটুকু। সকল বিপদে-আপদে, সুখ-দুঃখের শেষ আশ্রয়স্থলও। এরা হাসতে ভুলে গেছে চিরতরে। তারা আর কখনো বাবার কাধে হাত রেখে হাসিতে লুটিয়ে পড়বে না। এ ছিল এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। যা তাদের তাড়া করে সারাটি জীবন।
ইকরাম হত্যার হয়তো বিচার হবে, কারো কারো জেল হবে। কিন্তু একজন স্ত্রীর স্বামী হারানো শোক কেউ কি ভুলাতে পারবে? অকালে বিধবা হওয়ার কষ্ট কে বুঝবে? কেউ কি পারবে ফিরিয়ে দিতে তার সাজানো সংসার? সুখের অনুভূতি? জানি পারবে না। কেউ পারবে না এ সংসারে ফিরিয়ে দিতে হাসির জোয়ার। পারবে না মেয়েগুলোকে ফিরিয়ে দিতে বাবা নামক বটবৃক্ষ আর তাদের মুখের অকৃত্রিম হাসি।
ঈদ নিয়ে লিখতে বসেছিলাম কিন্তু কি লিখছি! আগেই বলেছিলাম আজ আমি বিভ্রান্ত। যাই হোক, ঈদ নিয়ে কিছু বলি। কিন্তু তাও ইকরামুল চলে আসছে। চলে আসছে তার নিঃস্ব পরিবার। কি করে বাবাকে ছাড়া প্রথম ঈদ কাঁটাবে বাচ্চা মেয়েগুলো? এ ঈদ তাদের জন্য কতটা খুশির হবে? নাকি পুরোটাই কষ্টে জর্জরিত? ঈদের নতুন জামা পড়ে সেজেগুজে মেয়েগুলো আর বাবার সামনে গিয়ে হাজির হবে না। “কেমন লাগছে বাবা?” এরকম প্রশ্ন করার আগে কেঁপে উঠবে তাদের ঠোঁট। মহারাজের মুখে রাজকন্যার প্রশংসা শুনে তারা আর লজ্জিত বদনে মাথা রাখবে না বাবার বুকে। সবই যে শেষ হয়ে গেছে। কারণ বাবা কেঁদেছে, ভয় নয় লজ্জায়। অবিশ্বাস আর আস্তাহীনতায়। অতঃপর টুসঠাস গুলির আওয়াজ।

জাকারিয়া মোহাম্মদ
সংবাদকর্মী