• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

শ্রীমঙ্গলে ত্রান বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ; অর্ধশতাধিক পরিবারে পৌঁছেনি সরকারী খাদ্য সহায়তা

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ৭, ২০২০
শ্রীমঙ্গলে ত্রান বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ; অর্ধশতাধিক পরিবারে পৌঁছেনি সরকারী খাদ্য সহায়তা

 আবুজার বাবলা, শ্রীমঙ্গল : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্র্রতিরোধ ও জনসমাগম এড়াতে গত ২৪ মার্চ থেকে শ্রীমঙ্গলে চলছে অঘোষিত লক ডাউন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারী নির্দেশনা কঠোর ভাবে মেনে চলতে বাধ্য করায় শ্রীমঙ্গলের উত্তর ভাড়াউড়ার খেটে খাওয়া মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু গেল ১৫ দিন যাবত ঘরে বসে থাকলেও পায়নি কোন ত্রাণ সহায়তা। ফলে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার শ্লোগান এখানকার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের কয়েক শ’ দরিদ্র মানুষের কাছে পরিহাস হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এতে করে করোনা মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারী যে খাদ্য প্রনোদনা কর্মসূচী তা প্রশ্নের মূখে পড়েছে। শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত উত্তর ভাড়াউড়ার পূর্ব ও পশ্চিম ধারে বসবাসরত বেশীর ভাগ মানুষই দরিদ্র। পুরুষরা ব্যাটারিচালিত রিক্সা- ভ্যান চালক, দিনমজুর, দোকান শ্রমিক, দর্জির কারিগর এবং মেয়েরা ইট ভাঙ্গা, বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারগুলো সরকারী সহায়তা অভাবে নিদারুন দুঃখ কষ্টের মধ্যে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল এলাকায় সরকারী সহায়তার ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এলেও এসব হতভাগ্য মানুষদের কপালে জুটেনি একদানা মোটা চাল। ৩নং সদর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে মাটির রাস্তা ধরে কিছুদূর এগিয়ে দেখা হয় মিনা বেগমের সাথে। স্বামী, ২ ছেলে, নাতি, ১ মেয়ে ও মেয়ে জামাই নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস। বললেন, ‘এতদিন হলো স্বামী ছেলেরা বেকার ঘরে বসা, কাজ-কাম নাই। ৬ মাসের বকেয়া বাসা ভাড়া মাথায় নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। সরকার থেকে কত জায়গায় চাল-ডাল দিচ্ছে আমাদের কপালে একটা দানাও জুটল না। ইউনিয়ন অফিসে গেলে চেয়ারম্যান বলেছেন সরকারী চাল আবার এলে দেয়া হবে। এখন সমিতি থেকে সুদে টাকা নিয়ে ভেঙ্গে খাচ্ছি’ মিনা বেগম ক্ষোভের সুরে বললেন। একই এলাকার ডেইজি বেগমও জানালেন কর্মক্ষম ছেলে, তাদের বউ নিয়ে এতটা দিন হলো কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর কথা। বলেন ‘মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি’। বিধবা মাসুক বেগমের রাজ মিস্ত্রি ছেলে গেল ১১ দিন ধরে কাজের সন্ধানে মৌলভীবাজার গিয়ে আটকা পড়েছে। ঘরে ছেলে বউ আর প্রতিবন্ধি ছোট ছেলে নিয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে। বললেন ‘শুধু শুনলাম সরকার চাল,ডাল, আলু দিচ্ছে। চেয়ারম্যান মেম্বার আইডি কার্ড এর ফটোকপি জমা নিয়ে রেখেছে চাল দেবে বলে, কিন্তু তার আর খবর নাই’। প্রতিবেশীদের সাহায্য সহায়তায় কোনমতে বেঁচে আছি, বললেন তিনি। পশ্চিম ধারের হাওরের রাস্তায় বসবাসকারী আমিন খাঁনের ছেলে দিনমজুর কাউছার মিয়া জানালেন, চোখের সামনে ইউনিয়ন থেকে যাদের চলার সামর্থ আছে এমন অনেক মানুষকে চাল-ডাল দেয়া হলো, অথচ আমরা গরীব মানুষ- আমাদের দেয়া হলো না। মেম্বাররা মুখ চিনে চিনে চাল-আলু দিয়েছে। কমিউনিটি ব্যাংকের নয়াপাড়া শাখার সিকিউরিটি কর্মী মো. তোতা মিয়ার স্ত্রী মিনি বেগম কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় স্বামী বাড়িতে ফিরতে পারেনি। কয়েকদিন ধরে ঘরে বাজার না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। এলাকার আম্বিয়া বেগম জানান, ছেলে টমটম চালাত। কয়েকদিন হলো শহরে যেতে পারে না। সরকার থেকে নাকি খাবার দিবে। কিন্তু কাউকে তো এ ছটাক চাল নিয়েও আমার ঘরের দরজায় আসতে দেখলাম না? এমন প্রশ্ন এখানকার অনেক পরিবারের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সরকারী খাদ্য সহায়তা পায়নি এখানকার প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র পরিবার। এসব পরিবারের মানুষদের মধ্যে ফাতেমা বেগম, হারুন মিস্ত্রি, সমুজ মিয়া, মিনারা বেগম, খায়ের মিয়া, পাখি বেগম, নীলা বেগম, রানু মিয়া, সিতারা বেগম, সানু মিয়া, তৌহিদ মিয়া, ডেইজি আক্তার, রাজন মিয়া, জাহানারা বেগম, আব্দুল বাসিত, রেবা খাতুন, জামাল মিয়া, মজিদ উল্লাহ, হারুন মিয়া, রাব্বুল মিয়া, সাদিকুর রহমান রিপন, পিরাণী বেগম, সালেহা খাতুন, আব্দুল হাকিম, শুকুর মিয়া, শেলী বেগম, মৌসুমি বেগম, রুশেনা আক্তার, জাফর ইসলাম, জাহাঙ্গির আলম, কামাল হোসেন, নেছাত্তর আলী, নেছাত্তর আলী, টিটিু মিয়া, শাহানা বেগম, ময়রম বেগম, মাহমুদুল হাসানসহ শতাধিক পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কিছু পরিবার অন্য ইউনিয়নের ভোটার হওয়ায় সবচে বেশী বিপাকে পড়েছেন। এসব পরিবারকে তাদের নিজ নিজ ইউনিয়ন থেকে ত্রান সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলে লক ডাউনের কবলে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এছাড়া ভাড়াউড়া চা বাগানের ৫ নং বস্তির চা অনিয়মিত শ্রমিক পরিবারের সুচিত্রা দাশ, সবিতা দাশ, শ্রীতম দাশ, চন্দন দাশ, দুরপতি দাশ ও অনিতা জানিয়েছেন তারা এ পর্যন্ত সরকারী কোন খাদ্য সহায়তা পায়নি। এসব পরিবারের লোকজন বেশীর ভাগই ইট ভাঙ্গা, দিনমজুর ও সিএনজি অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষ সরকারী খাদ্য সহায়তা অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এদিকে ইউনিয়নে সরকারী খাদ্য বিতরণ ও নিবন্ধিত কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের তালিকায়ও রয়েছে নানা অসংগতি। অভিযোগ আছে, প্রকৃত দুঃস্থ মানুষদের বঞ্চিত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছের লোকদের ভিজিএফ কার্ড ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়রা বলেছেন অনেক পরিবার বিভিন্ন কর্মসূচীর আওতায় একাধিক বার সরকারী খাদ্য সুবিধা পেলেও অনেকে একেবারেই বঞ্চিত হচ্ছেন। এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় জানান, সদর ইউনিয়ন ছাড়া অন্য ইউনিয়নের ভোটারদের খাদ্যসহায়তা দেয়ার কোন নির্দেশনা নেই। ইউএনও অফিস থেকে সেরকম কোন নির্দেশনা পাওয়া গেলে তাদেরকেও সহায়তা দেয়া হবে। জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন (৭ এপ্রিল) বিকেলে ইউনিয়নগুলো থেকে তালিকা আসবে, এর সাথে কেউ বাদ পড়লে তালিকায় অন্তুর্ভুকক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।