• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

শ্রীমঙ্গলের অসহায় শরিফা কে সহায়তা দিলেন জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন

admin
প্রকাশিত মে ১৭, ২০২০
শ্রীমঙ্গলের অসহায় শরিফা কে সহায়তা দিলেন জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন

নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৪ মে বুধবার রাত প্রায় ২টা। মাঝবয়সী এক নারী শ্রীমঙ্গল থানার বিপরীতে একটি মার্কেটের সামনে ২টি বাচ্চা নিয়ে নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করছিলেন। বাচ্চা দুটি মশার যন্ত্রনায় ঠিকমত ঘুমাতেও পারছিল না। ময়লা একটি কাঁথা গায়ে জড়িয়ে মশার উৎপাত থেকে বাচ্চা দুটিকে ঘুমিয়ে রাখতে প্রাণন্তকর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন মা। কিছুটা দূর থেকে এ দুঃসহ দৃশ্য দেখে সামনে এগিয়ে যান সাংবাদিক সৈয়দ সালাউদ্দিন। তিনি কাছে গিয়ে ওই মহিলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার নাম শরিফা আক্তার, বয়স আনুমানিক ৪২ বছর। মাস কয়েক আগে স্বামী ফেলে চলে গেছে। আর কোন খোঁজ খবর নেননি। পরের বাসায় ঝি’য়ের কাজ করে নয় বছরের মেয়ে রূপালী আক্তার আট বছরের ছেলে লিজানকে নিয়ে শাপলাবাগের জনৈক রুবেল মিয়ার বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়ে কোন রকমে দিন পার করছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা লক ডাইনের কারণে শরিফার জীবনে ছন্দ পতন ঘটে। কাজের অভাবে কর্মহীনহয়ে পড়েন। ঘর ভাড়া বাকি পড়ে যায় ২ মাসের। কোন মতে ১ মাসের ঘর ভাড়া শোধ দিতে পারলে ও ১ মাসের ৭শ টাকা ’ ভাড়া বাকি পড়ে যায়। কিন্তু ঘরের মালিক তা মানতে নারাজ। ১ মাসের করে ঘর ভাড়া ৭শ’ টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ঐদিন রাত ১১ টার দিকে বাড়িওয়ালা রুবেল এক কাপড়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়। কোন উপায় না দেখে অবুঝ ২ সন্তানকে নিয়ে শহরে আশ্রয় খুঁজতে নেমে পড়েন। এক সময় এই মার্কেটের সামনে অভুক্ত বাচ্চা দুটিকে নিয়ে আশ্রয় নেন।

মর্মস্পর্শী এই দৃশ্যে দেখে সালাউদ্দিন মহিলাটিকে তাৎক্ষনিক সান্তনা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এর আগে তাকে জানান সেহেরির সময় তিনি এসে একটা ব্যবস্থা করবেন, মহিলাকে তিনি এ আশ্বাস দিয়ে যান। এসময় সালাউদ্দিন ২ বাচ্চা নিয়ে মহিলাটির খোলা আকাশের নিচে রাত যাপনের একটি ভিডিও ছবি ধারণ করে তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আইনশৃংখলা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ফেসবুকে অসহায় মাহিলার এই এ অবস্থা দেখে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আশরাফুজ্জামান আশিক তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থলে যান। এর আগে তিনি শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে নেন। পরে তারা রাতেই মহিলা ও তার বাচ্চাদের খাবার খাওয়ায়ে বস্তিতে তাদের ঘরে রেখে আসেন। এসময় তাকে কিছু নগদ অর্থ ও আরো কিছু খাবার দেন সিনিয়র এএসপি আশরাফুজ্জামান ।
এদিকে রাতের মধ্যেই সালাউদ্দিন এর দেয়া ফেসবুক পোস্ট দেশ বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অসংখ্য ইউজার লাইক ও কমেন্ট করে অসহায় ওই দরিদ্র মহিলার প্রতি সমবেদনা জানায়। অনেকে অর্থ দিয়ে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। কেউ কেউ ফোন করে তাৎক্ষনিক অর্থ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সৈয়দ সালাউদ্দিন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের এই প্রতিক্রিয়া দেখে আমি সত্যিই অভিভূত ! ভোর রাতের মধ্যেই দেশ বিদেশ থেকে পরিচিতজনরা ৯ হাজার ৭শ’ ২০শ’ টাকা পাঠান। এতে সৌদি আরব থেকে আবুল বাসার, লন্ডন স্বেচ্ছা সেবক লীগের সহ সভাপতি জামান আহমেদ শহরের শাহজীবাজারের রুজেল মিয়া প্রত্যেকে শরিফার জন্য ৩ মাস করে ৯ মাসের ঘর ভাড়া সমপরিমান টাকা সহায়তা করেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল থানার ওসি তদন্ত সোহেল রানা ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্ধু নগদ অর্থ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন বলে সালাউদ্দিন জানান।

পরদিন ১৫ মে দুপুরে সৈয়দ সালাউদ্দিন শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা, স্থানীয় সোহেব আহমেদ, রুজেল মিয়াকে সাথে নিয়ে মহিলাটিকে দেখতে যান। এসময় মহিলা ও তার ২ বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়, ফলমূল দেয়া হয়। একই সাথে তার জন্য দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া সাহায্যর অর্থ মহিলার হাতে তুলে দেয়া হয়। এছাড়া ১৬ মে ওয়ালটন ইলেক্ট্রনিক্স এর পক্ষে ওয়ালিউল ইসলাম আজিম একই ভাবে মহিলাকে ৩ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করেন। সর্ব শেষ ওই ভিডিও দেখে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন শনিবার শ্রীমঙ্গল এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মহিলার পরিবারকে ডেকে নেন। এসময় জেলা প্রশাসক শরিফাকে নগদ ৫ হাজার টাকার অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, সেহেরির সময় সালাউদ্দিন সাহেবের ফেসবুক আইডিতে শরিফার বিষয়টি নজরে আসে। সাথে সাথে ইউএনও সাহেবকে মহিলাটির বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া ও প্রয়োজনীয় সহযোগীতার নির্দেশ দেই।
শরিফা আক্তার এত মানুষের ভালবাসায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তাগণ, দেশ বিদেশ থেকে যারা নামে বেনামে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন- তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে সাংবাদিক সৈয়দ সালাউদ্দিন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শরিফা বলেন, ‘এই ভাইটির সাথে দেখা না হলে ছেলে মেয়ে দুটি নিয়ে আমাকে হয়তো আরো বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।।