• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বড়লেখায় সড়ক নয় যেন পুকুর : সীমাহীন জনদুর্ভোগ, কাজের ধীরগতি

admin
প্রকাশিত জুন ৩, ২০২০
বড়লেখায় সড়ক নয় যেন পুকুর : সীমাহীন জনদুর্ভোগ, কাজের ধীরগতি

মস্তফা উদ্দিন: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এলজিইডি’র দাসেরবাজা-বাছিরপুর সড়কের দাসেরবাজার ত্রিমুখী পয়েন্টে পাকা রাস্তায় তিন বছর আগে সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে আবারো অবস্থা বেহাল হয়ে উঠেছে।  এ কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে অবস্থা এতটাই শোচনীয় রূপ নিয়েছে যে এটিকে দেখে মনে হয় রাস্তা নয় যেন পুকুর। ৮মাস আগে সড়কটি পুনর্বাসন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটির সংস্কারে হাত লাগায়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে কয়েক দফা বলা হলেও নেয়া হয় নি কোন উদ্যোগ। এতে উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক জনসাধারণকে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, দাসেরবাজার-বাছিরপুর আরএইচডি ভায়া কানুনগোবাজার আজিমগঞ্জ সড়কটি বড়লেখা উপজেলার পশ্চিম  দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে উপজেলার দাসেরবাজার তালিমপুর এবং ফকিরবাজার ইউনিয়ন ছাড়াও গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাজারো মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন।

গত প্রায় ৩ বছর আগে এ সড়কের দাসের বাজারের পশ্চিম পাশের ত্রিমুখী পয়েন্টে গর্তের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ সড়কের দক্ষিণ পাশের জমিটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের এক আত্মীয় উঁচু করে ভরাট করে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার ফলে পাকা রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন করে দিতে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে স্থানীয়ভাবে দাবি জানালেও কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নি। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে  চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। গত বছর বর্ষা মৌসুমে পানি জমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে স্থানীয়দের উদ্যোগে সেচ মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে এবং বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও বর্ণী গ্রামের প্রবাসী সাইফুর রহমানের আর্থিক সহযোগিতায় ইট ফেলে গর্ত ভরাট করা হয়। এসময় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমসহ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে স্থায়ী সংস্কার না হওয়াতে এই সড়কে চলাচলরত যানবাহন, চালক ও যাত্রী, পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার-বাছিরপুর আরএইচডি ভায়া কানুনগোবাজার আজিমগঞ্জ ১৬ কিলোমিটার সড়ক পূনর্বাসন কাজের টেন্ডার পায় কুলাউড়ার RAB-RC(PVT) LTD নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের অক্টোবর মাসে এ পুনর্বাসন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের বাছিরপুর অংশে কাজ শুরু করেলেও গত একমাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে এলজিইডি।

স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনগুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটির মেরামতে এখনো হাত দেয় নি। এছাড়াও পানি নিঃস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন গর্ত বড় হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে উপজেলার দাসেরবাজারের পশ্চিম পার্শের ত্রিমূখী পয়েন্টে দেখা গেছে, সড়কের গর্তে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। আশেপাশে পানি নিষ্কাশনের নেই ব্যবস্থা। জমিটি উঁচু করে ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সৃষ্ট গর্তের কারণে যানবাহন সহ যাত্রী সাধারণকে পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেয়া ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দাসেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তাটির কাজ শুরু হয়েছে। কাজ হয়ে গেলে জনদুর্ভোগ থাকবেনা।’

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন বলেন, ‘পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এখানে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়ে জনদূর্ভোগ বাড়ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ড্রেন করে দেওয়ার বিষয়ে বলা হলেও কোন ব্যবস্থা নেন নি। সাধারণ মানুষ চলাচলে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। দ্রুত কাজ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও তাগিত দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ বলেন, ‘জনগুরুতপুর্ন এই সড়কটির পূনর্বাসন কাজের টেন্ডার হয়েছে ১ বছর আগে । কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফেলতিতে জনসাধারণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মানুষের দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যথাযত কর্তৃপক্ষকে তাগিত দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সামছুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখে। আমরা চিঠি দিয়েছি যাতে দ্রুত কাজ শুরু করা হয়। সময়ের মধ্যে যাতে কাজটি সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি।