• ২৭শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঢাকার কম্পনে ফল্টলাইনের ভূ-ঝুঁকি নিয়ে সিলেট আবারও পেল সতর্কবার্তা

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ২১, ২০২৫
ঢাকার কম্পনে ফল্টলাইনের ভূ-ঝুঁকি নিয়ে সিলেট আবারও পেল সতর্কবার্তা

শাহনেওয়াজ চৌধুরী সুমন :

২১ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় অনুভূত হয় ৫.৭ মাত্রার এক মাঝারি ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। মাত্রা বড় না হলেও উৎপত্তিস্থল রাজধানীর খুব কাছাকাছি হওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কম্পন তীব্রভাবে টের পাওয়া যায়। দুর্বল ও পুরোনো ভবনের আধিক্য এবং অপরিকল্পিত নগর কাঠামোর কারণে এমন ভূমিকম্প ঢাকায় তুলনামূলক বেশি ঝুঁকি তৈরি করে—বলছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।

সিলেট‌ সক্রিয় ফল্টলাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি অঞ্চল । ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও ভূমিকম্পটির প্রভাব বিশ্লেষণে আবারও সামনে এসেছে সিলেট বিভাগের ভূগাঠনিক ঝুঁকির বিষয়টি। মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট অঞ্চল দেশের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এর মূল কারণ দক্ষিণে অবস্থিত সক্রিয় ডাউকি ফল্ট লাইন, যা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষকদের নজরে।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়—এই ফল্টলাইন যেকোনো সময়ে বড় ধরনের শক্তি মুক্ত করতে পারে। অতীতে সিলেট ও আশপাশে অনুভূত কয়েকটি কম্পনও এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।

আজকের ভূমিকম্প: ক্ষতি না হলেও বার্তা স্পষ্ট… সিলেট বিভাগে সরাসরি ক্ষতির খবর না থাকলেও আজকের ঘটনাটি বিশেষজ্ঞদের কাছে এক ধরনের সতর্ক সংকেত। তাদের ভাষায়— “দূরবর্তী ভূমিকম্পও সক্রিয় ফল্টলাইনের ওপর চাপ বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে।”

অতীতের অভিজ্ঞতাও বলে, বড় ক্ষতি না হলেও বারবার মধ্যমাত্রার কম্পন ভবিষ্যতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। ফলে সিলেট অঞ্চলে ভবন নিরাপত্তা যাচাই, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার তালিকা হালনাগাদ এবং জনগণের দুর্যোগ প্রস্তুতি বাড়ানো—সবই এখন সময়ের দাবি।

ঝুঁকি কমাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও জাতীয় ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ডাউকি ফল্টসহ সিলেট অঞ্চলে গবেষণা এবং ভূমিকম্প সহনশীল নকশায় ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ রয়েছে । এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সার্বিক মত—“ভূমিকম্প ঠেকানো যায় না, কিন্তু প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”

ঢাকার আজকের ভূমিকম্প সিলেটে তেমন কোনো ক্ষতি না করলেও এটি আবার মনে করিয়ে দিল—ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অনিশ্চয়তাই সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ, জনসচেতনতা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা প্রস্তুতি ব্যবস্থা। সিলেট বিভাগের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয়—ঝুঁকিকে স্বীকার করে সঠিক সময়ে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া।‌ ভূমিকম্পপ্রবণ একটি ভূগাঠনিক অঞ্চলে বাসকারী হিসেবে সিলেট বিভাগের মানুষের জন্য প্রস্তুতি, সচেতনতা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পরিকল্পনা এখন সময়োপযোগী প্রয়োজন। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে স্থানীয় প্রশাসন, গবেষক ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগই হতে পারে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রধান ভিত্তি।

তথ্যসূত্র:
https://dhakamail.com/technology/268378?utm_source=chatgpt.com “আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কোথায় ছিল?”
https://www.jugantor.com/national/1031737?utm_source=chatgpt.com “ভূ-কম্পের যে মাত্রায় কাঁপল ঢাকা”
https://www.jagonews24.com/national/news/1069706?utm_source=chatgpt.com “ঢাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প – Jagonews24”

https://www.reuters.com/business/environment/earthquake-magnitude-57-strikes-bangladesh-gfz-says-2025-11-21/?utm_source=chatgpt.com