• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লামুয়ায় জোড়া খুনে গ্রামবাসী আতংঙ্কে, হামলার আশংকায় এখনও বাড়ি ফিরছেন না নিহত শফিকের মা বানেছা বেগম

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের লামুয়া গ্রমের শফিকুর রহমান (২০) এর হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে মামলার বাদী নিহতের পরিবার ও তাদের গোষ্ঠির লোকজনকে। মনর মিয়ার গোষ্ঠির লোকেরা এখনও লুটপাট করছে নিহতের পরিবার পক্ষের মানুষের ঘরবাড়ি। ঘটনার দেরমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও নিহত শফিকুর রহমানের পরিবার ও পক্ষের লোকজন মনর মিয়ার(ফকির গোষ্ঠি) লোকের ভয়ে বাড়িতে ফিরতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৪ জুলাই পতিত জমি নিয়ে তোতা মিয়া গোষ্ঠির ও ফকির গোষ্ঠির লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের দুই জন নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ৪০ জন। এসময় লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। গ্রেফতার আতংকে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে, কদম্মপুর লামুয়া ও পূর্ব খলিলপুরের তিনটি গ্রাম। উভয় পক্ষে খুনের মামলা সহ কয়েকটি মামলা হয়। বর্তমানে মনর মিয়া (ফকির গোষ্টির) লোকজন জামিনে এসে তোতা মিয়া পক্ষের লোকজনের বাড়িতে আবারও লুটপাট ও বাড়িতে থাকা মহিলাদেরে নির্যাতনের হুমকি দিচ্ছে। নিহতের মা বানেছা বেগম (৬০) ছেলে মারা যাওয়ার পর ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বসবাস করছেন। নিহতের মা বানেছা বেগম বলেন, আমার ছেলে খুন হল, অন্যদিকে অপর পক্ষের মামলায় আমার চার ছেলে জেলে থাকায় আমার মেয়ে ও পুত্রবধূদেরে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা থাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে থাকি। আমার ছেলের খুনিদের কিছু লোক জামিনে গিয়ে আরও কিছু আসামী প্রকাশ্যে উল্লাস করে বেড়াচ্ছে। মুকিদ, সায়েক, লায়েক, দিলু, ফারুক প্রকাশ্যে আমাদেরে হুমকি দিচ্ছে। এমন কি আমার ঘরের টিন খোলে নিয়ে গেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। কম্মদপুর গ্রামের জ্যোৎস্না বেগম (৩৮) জানান, ফকির গোষ্ঠির মুকিদ মিয়া,আলা, কামরুজামান, লায়েক,লাকী মিয়া, জতুন মিয়া, ফুরকান মিয়া পালাতক আসামী কিন্তু প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের কোন পুরুষ মানুষ বাড়িতে না থাকায় তারা রাস্তাঘাটে আমাদেরকে পথ আটকিয়ে অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা বলে, হুমকি ধামকি দেন। তাদের ভয়ে আমরা বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করে মানবেতর জীবন যাপন করছি। হেনা বেগম ওরফে পরিজান বিবি (৪০) জানান, মুকিদ মিয়ার নির্দেশে তার লোকেরা ঈদের দিনে উল্লাস করে আমার বাড়ি ঘর আবারও লুটপাট করে। তাদের ভয়ে আমি বাড়ি ছাড়া। নবীগনজ উপজেলার আওয়াল মিয়া (২৫) এসেছেন বোনের বাড়িতে। তিনি বলেন, বোনের স্বামী বাড়িতে না থাকায় তাদের ক্ষেতের কাজ করার জন্য তাকে মাটে যেতে পতিপক্ষ বাধা দেয়। জ্যাৎ¯œা বেগমকে তাহার বাড়ি থেকে আনতে গিয়ে ছিলাম। আমাকেও মুকিদ মিয়ার লোকেরা নাজেহেল করে।


প্রবাসী আওয়াল মিয়া (৩২) জানান, সংঘর্ষের দিন নিহত শফিকের লাশ ঘটনাস্থল থেকে আমি আনতে গেলে ফকির গোষ্টির লোকেরা আমার মাথায় একটি আঘাত করে ও পিটে ঘাঁ দেয়। এতে আমি মারাতœক আহত হই। এরপরও মামলার আসামী হয়ে জেলে যাই। বর্তমানে পঙ্গু হয়ে আছি। মামলার কারণে আমার ভিসা নষ্ট হওয়ায় আর বিদেশে যাওয়া হয়নি। এখনও ফকির গোষ্ঠির অত্যাচারে এলাকায় থাকা যাচ্ছেনা। এলাকার দিলাওর মিয়া (৪০) জানান, আমি অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে একটি দোকান দিয়ে ছিলাম। সংঘর্ষের দিন আমার দোকান মুকিদ মিয়ার লোকেরা ভাংচুর ও লুটপাট করে মালামালসহ ফ্রিজ, টিভি আসব্বপত্র নিয়ে যায়। এরপরও আমার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (১৭) ও ভাতিজা সেলিম মিয়াকে তারা খুনের মামলার আসামী করেছে। বিবিজান বিবি (৬৫) কাঁন্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার জীবনে এমন অনাচার আর দেখিনি বাবা। ঘটনার দিন মুকিদ, বাবলু, আবু সালে, মকবুল, মাখবুল, ফজল মিয়া, জাবেদসহ ফকির গোষ্ঠির লোকেরা আমার বাড়িঘর ভাংচুর করে। তাদের খুনের মামালায় আমার দুই ছেলে শামল মিয়া ও রাসেল মিয়াকে আসামী করেছে। বৃদ্ধ বয়সে লাটি ভর দিয়ে কোন ক্রমে হাঁটি। তাদের নির্যাতনে মেয়েদের ইজ্জত বাঁচাতে অন্যত্র থাকি। সুফিয়া বেগম (৪০) বলেন, আমার স্বামী শফিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে দেখতে যান । তারপর ও আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করেছে ও আমার স্বামীকে হুকুমদায়ী আসামী করেছে। এখনও মুকিদ মিয়া ও তার ছেলেরা ফোনে হুমকি দেয়। আনসার সদস্য লিয়াকত মিয়ার বোন শাহানাজ পারভিন জানান আমার ভাই লিয়াকত ভাতিজার আকিকা অনুষ্টানের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন ঘটনার সময় তিনি নিহত শফিকুর রহমানের চিৎকার শুনে তাকে বাঁচাতে গেলে মুকিত মিয়ার লোকেরা প্রাণে হত্যার উদ্যোশে মারাত্রক ভাবে আহত করে তিনি এখনো সুস্থ হতে পারেন নাই দীর্ঘ দের মাস যাবৎ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন জোড়া খুনের দের মাস পরও অদৃশ্য কারণে পতিক্ষের আসামি ধরাচোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তোতা মিয়া গোষ্ঠির লোকজন এখনও তাদের বাড়ি ঘরে ফিরতে পারচ্ছেনা। আবারও যে কোন সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে নিরিহ এলাকাবাসীর ধারনা। জি আর ১৯৫/১৮ইং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই ইমরানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ‘অধিকাংশ আসামী গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এর বেশিরভাগই আদালত থেকে জামিনে রয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে,খুব শীগ্রই বাকি আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে’।