• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে অনলাইনে স্মরণসভার আয়োজন করলেন দেশের সকল ব্র্যাক অফিসের কর্মীরা

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২০, ২০২০
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের  প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে অনলাইনে স্মরণসভার আয়োজন করলেন দেশের সকল ব্র্যাক অফিসের কর্মীরা

শাহনেওয়াজ চৌধুরী সুমন : বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল আজ ২০শে ডিসেম্বর (রবিবার)। ২০১৯ সালের এইদিনে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অনলাইন স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের সকল ব্র্যাক অফিসের কর্মীরা অনলাইনে এই স্মরণসভায় যুক্ত হন। কেন্দ্রীয় স্মরণসভা শেষে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে স্থানীয়ভাবে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

‘আমার চোখে আবেদ ভাই’ শিরোনামে একটি ওপেন ফোরামে কর্মীরা তাদের চোখে স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন-দর্শন ও মূল্যবোধ তুলে ধরেন। অনেক কর্মী স্যার আবেদের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত স্মৃতি ও অনুভূতি তুলে ধরেন। এছাড়াও, তার বর্ণাঢ্য জীবন ও অর্জন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্রও স্মরণসভায় প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

এর পূর্বে ১৭ই ডিসেম্বর ব্র্যাক আন্তর্জাতিক এবং ১৯শে ডিসেম্বর ব্রাক ইউনিভার্সিটি অনলাইনে অভ্যন্তরীণ স্মরণসভার আয়োজন করে। স্যার ফজলে হাসান আবেদ ৩৬ বছর বয়সে, ১৯৭২ সালে তৎকালীন সিলেট জেলায় একটি ক্ষুদ্র ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৪৭ বছরে বহুবিস্তৃত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক বিশ্বের অন্যতম কার্যকরী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়। মাইক্রোফাইন্যান্স,সামাজিক ব্যবসা, বিশ্ববিদ্যালয়,ব্যাংক এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে নানামাত্রিক বিনিয়োগ সমন্বয়ে ব্র্যাক আজ বিশ্বের বুকে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি এশিয়া ও আফ্রিকার ১২টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭শে এপ্রিল তৎকালীন সিলেটের হবিগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬২ সালে কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হন। পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানিতে সিনিয়র কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তাঁর জীবনের মোড় সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চাকরি ছেড়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ এবং ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর ১৯৭২ সালে স্যার ফজলে দেশে ফিরে আসেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত শাল্লা এলাকায় ফিরে আসা শরণার্থীদের নিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেন।

আজ ব্র্যাক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। ব্র্যাকের প্রধান লক্ষ্য দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর
আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা চার বছর জেনেভা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা ‘এনজিও অ্যাডভাইজার’ কর্তৃক ব্র্যাক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। প্রভাব, উদ্ভাবনশীলতা, টেকসই সমাধান এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের নিরিখে বিশ্বের ৫০০ এনজিওর মধ্যে তুলনার ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। পুরস্কার ও স্বীকৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় স্যার ফজলে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হন। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পুরস্কার ‘ইদান প্রাইজ (২০১৯), প্রাক-শৈশব উন্নয়ন কর্মকান্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন কর্তৃক লেগো পুরস্কার (২০১৮), দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সম্ভাবনা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য লুডাটো সি অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (২০১৫), ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট (২০১৪), লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডাল অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), শিক্ষাক্ষেত্রে ওয়াইজ প্রাইজ ফর এডুকেশন (২০১১), ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), ইউএনডিপি মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং কনট্রিবিউশন টু হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (২০০৪), ওলফ পামে প্রাইজ (২০০১) এবং র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফর কমিউনিটি লিডারশিপ (১৯৮০)। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকা স্যার ফজলেকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। তিনি এর মর্যাদাসূচক গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিশন অন হেলথ রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট (১৯৮৭-৯০), ইন্ডিপেনডেন্ট সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পভার্টি অ্যালিভিয়েশন (১৯৯১-৯২) এবং হাইলেভেল কমিশন অন লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অব দ্য পুওর (২০০৫-২০০৮)-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্যার ফজলে ২০১০ সালে ব্রিটেনের রানী প্রদত্ত নাইটহুড মর্যাদা লাভ করেন। ২০১০ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশসমূহের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শদাতা দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন কর্তৃক স্যার ফজলে বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্বের অন্যতম হিসেবে উল্লেখিত হন। স্যার ফজলে এ বছর (২০১৯) নেদারল্যান্ডের রাজা কর্তৃক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন। ব্র্যাক-মৌলভীবাজার এ ব্র্যাকের ৩৩টি অফিসে স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রথম মৃত্যু তার বার্ষিকীতে তার আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। রেডিও পল্লীকন্ঠ ৯৯.২ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।